বেনারস কালীবাড়ি ও কুচবিহার রাজ্য। Benaras Kalibari Coochbehar

VSarkar
0
benaras kalibari

বেনারস কালীবাড়ি ও কুচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড। Benaras Kalibari Coochbehar

Writer: Kumar Mridul Narayan

 (কয়েকটি কথা ও কয়েকটি প্রস্তাব) 

অতিসম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বেনারস কালীবাড়ি বা কালী (Benaras Kalibari) মন্দির চত্বরে, ভবনের নাম ও ঠিক করে ফেলেছে (প্রসঙ্গ বঙ্গভবন)। কিছু নিউজ পোর্টাল, পত্রিকায় এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে এবং অনেকেই এই প্রসঙ্গে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে এবং অনেকেই ভালো ভালো উপদেশ এবং প্রস্তাব দিয়েছে এবং অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এই মন্দিরের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে,  মহারাজাদের  দেবোত্তর সম্পত্তি Coochbehar Merger Agreement  এর ফলে এখন দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সম্পত্তি।

দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড (Debuttor Trust Board Coochbehar) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দেবত্র  ট্রাস্টের জমিতে (করতে পারে কিনা সেটাও দেখা উচিত) – যতদূর জানা যায়, পুরোনো প্রাসাদ “হাওয়া মহল” (Hawa Mahal) এর সামনে, আবার কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছে ফাকা এক একর জমিতে,  বা মূল মন্দিরের পাশে নতুন ভবন নির্মাণ করবে। বহু সময় শোনা যায়, এই কালিবাড়ির অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে, বিশেষ করে বৃদ্ধাশ্রমটি নাকি পুরোপুরি বেদখল হয়ে আছে। মন্দিরগুলি জরাজীর্ণ অবস্থার সম্মুখীন, হাওয়া মহল, লাইব্রেরীর অবস্থাও খুব ভালো নয় সংস্কার হলেও আমাদের চোখের সামনে কুচবিহার জেলায় দেবত্র ট্রাস্টের  মন্দিরের অনেক জায়গা বেদখল, বারানসী তো অনেক দূর। আবার সঠিক খবরটুকু জানা যায় না। তবুও প্রশ্ন জাগে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা কেন মন্দির চত্বরে ?বিকল্প ব্যবস্থা ও তো করতে পারত। কিন্তু সরকার চাইলে সবকিছুই করতে পারে। সরকার যদি মনে করে ভবন নির্মাণ করবে সেক্ষেত্রে সে ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রস্তাব রাখা যেতে পারে।

benaras kalimandir coochbehar

See more images of  Benaras Kalibari

১) মন্দিরের পূর্ব এবং বর্তমান যে নামগুলি আছে সেগুলিকে অক্ষত রাখতে হবে। শুধু তাই নয় ভবন নির্মাণের নামে ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলিকে ঢেকে ফেলা যাবে না বা  কোনঅংশ ভেঙ্গে ফেলা যাবে না। এই বিষয়টি দায়িত্ব সহকারে দেখতে হবে। পুরনো নামগুলিও অপরিবর্তিত রাখতে হবে। বেনারস কালীমন্দির, হাওয়ামহল, লাইব্রেরী, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি।

২) এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর (Maharaja Harendranarayan) এবং মন্দিরটি সংস্কার করেছিলেন তার পুত্র শিবেন্দ্র নারায়ন ভূপবাহাদুর। তাই নতুন ভবনটির নামকরণ মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ন বা শিবেন্দ্র নারায়ন ভবন  রাখতে হবে। এই বিষয়ে কোনরকম আপস হবে না।সরকারকে এই বিষয়ে লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিতে হবে। অন্যথায়…..

৩) যেহেতু  কুচবিহার মহারাজারা তৎকালীন কুচবিহার রাজ্যের রাজপরিবারের লোকেদের, বৃদ্ধাদের  এবং রাজকর্মচারীদের শেষ জীবনে থাকার জন্য এই বৃদ্ধাশ্রমটি করেছিলেন, স্বাভাবিক কারণেই বর্তমান কুচবিহার জেলার রাজপরিবারের লোকেদের এবং এই জেলার  জনগণের জন্য মহারাজার নামে নামাঙ্কিত নতুন ভবনে  বিশেষ পাস বা সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারে।

৪) নতুন ভবন নির্মাণ হলে এটিকে দেখবার এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোকের প্রয়োজন পড়বে। কুচবিহারের নিজস্ব সম্পত্তির উপর কাজ করার অগ্রাধিকার এই জেলার মানুষকে দিতে হবে।

৫) বারানসীর (Varanasi) সঙ্গে কুচবিহারের (Coochbehar) সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভারতের নরনারায়ন, বীর চিলারায় বারাণসীতে সংস্কৃত ও বিভিন্ন বিষয়ে  শিক্ষা নিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে যাওয়া এই জেলার ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাসের সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। 

৬) মনে রাখতে হবে একদিকে আমরা ঐতিহ্য রক্ষার কথা ভাবছি, হেরিটেজ শহর করছি, অন্যদিকে ঐতিহ্যের স্থাপত্যকে ধ্বংস করছি এমন কাজ যেন না হয়। 

৭) এককথায় কুচবিহারের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে হবে।

বেনারস কালীবাড়ি বা কালীমন্দির (Benaras Kalibari or Kalimandir) 

উত্তরপ্রদেশের বেনারস (Benaras) বা বারাণসী সোনারপুর মহাল্লায় বেনারস কালীবাড়ি (Benaras Kalibari) মন্দির অবস্থিত। কুচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণ শেষ জীবনে বেনারসে বসবাস করতে লাগলেন এবং কালীবাড়ি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এখানেই দেহত্যাগ করেন। মন্দির প্রতিষ্ঠারকাজটি সম্পূর্ণ করতে না পারলেও, পিতার স্বপ্ন পূরণ করেন তার সুযোগ্য পুত্র মহারাজা শিবেন্দ্র নারায়ণ ১২৫৩ বঙ্গাব্দের ২৪ শে বৈশাখ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন। ওই মন্দিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “করুণাময়ী কালী” (Karunamayi Kali) এবং একটি বিশাল সত্র নির্মাণ করেন। সত্রর দক্ষিণ দিকে প্রবেশদ্বারে লেখা আছে “করুণাময়ী কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কুচবিহাররাজ শিবেন্দ্র নারায়ণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত”। এই সত্রের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করত কুচবিহার রাজসরকার।

১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে এই কালীবাড়িতে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর নিজে সশরীরে উপস্থিত থেকে সত্রে খাওয়ানোর বিষয়টি স্বচক্ষে দেখেছিলেন এবং খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৬/২০১৮ সালে কুচবিহার এক প্রশাসনিক আধিকারিক  এই মন্দিরের লাইব্রেরী থেকে মহারাজদের নিজস্ব লেখা পুথি, বইপত্র নিয়ে এসেছিলেন এবং বর্তমানে দেবত্র ট্রাস্টবোর্ড এই মন্দিরের দেখভাল করে। শিব মন্দির, কালী মন্দির ও বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে কালীবাড়ি চত্বরে।

বেনারস কালীবাড়ি ও দাবীদাওয়া – প্রসঙ্গ বঙ্গভবন

মহারাজাদের সৃষ্ট এই মন্দির নিয়ে  কুচবিহারবাসীর আবেগ, ভালোবাসা ও সম্মান রয়েছে। বর্তমান সরকারের সম্পত্তি হিসেবে সরকার এটাতে কি করবে, সেটা সরকারের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু আমার মনে হয় এ বিষয়ে কুচবিহারবাসির মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া  উচিত। যেহেতু দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের তিনটি সদস্য পদ ফাঁকা আছে। আমি ব্যক্তিগত কয়েকটি মত প্রকাশ করলাম। সকলের পছন্দ নাও হতে পারে। 

দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতিকে স্মারকলিপি প্রদান The Cooch Behar Royal family Successors Welfare Trust. এর পক্ষ থেকে  See More

কোচবিহারের ভারতভুক্তি চুক্তি অনুসারে মন্দিরের জমিতে কী ভবন তৈরি করতে পারবে রাজ্য? See Here

কুচবিহার হাওয়ামহল, কুচবিহার কালীবাড়ি, বেনারস,উত্তরপ্রদেশ See More

বঙ্গভবন নাম না রেখে মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণের নামে প্রস্তাবিত ভবনটির নাম, দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড এর অধীন পরিচালনা ও ৭০% ঘর বৃহত্তর কোচবিহার / উত্তরবঙ্গ বাসীর জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবীতে বিশ্বরাজবংশী উন্নয়ন মঞ্চ –

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)