উডল্যান্ডস প্রাসাদ কিভাবে উডল্যান্ডস হসপিটাল হল? Woodlands Palace Kolkata

VSarkar
woodland palace coochbehar

উডল্যান্ডস প্রাসাদ এখন উডল্যান্ডস হসপিটাল, কলকাতা। Woodlands Palace Kolkata

১৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে মহীশূরের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হলে টিপু সুলতান এর দুই ছেলেকে যে প্রাসাদে হত্যা করা হয়েছিলো তার নাম উডল্যান্ডস প্রাসাদ (Woodlands Palace, Kolkata)। এই উডল্যান্ডস প্রাসাদ এখন উডল্যান্ডস হসপিটাল বা উডল্যান্ডস নার্সিং হোম (Woodlands Hospital) । কিন্তু কিভাবে কুচবিহার রাজ্যের স্মৃতি বিজরিত উডল্যান্ডস প্রাসাদ উডল্যান্ডস হসপিটাল বা নার্সিংহোমে পরিনত হল তা আজকে জানব। মহারানী গায়ত্রী দেবীর A Princess Remembers আর মহারানী সুনীতি দেবীর The Autobiography of an Indian Princess বইতে কলকাতার বুকে কুচবিহার রাজ্যের হারিয়ে যাওয়া সম্পদ উডল্যান্ডস প্রাসাদ সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। 

১৮৭৯ সালে কুচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর (Maharaja Nripendra Narayan) যখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে (Kolkata Presidency College) আইন নিয়ে পড়াশুনা করতে যান তখন এই প্রাসাদটি প্রথমে ভাড়া হিসেবে নেওয়া হয় এবং এর সংস্কার করা হয়। ১৮৮৩ সালে এই উডল্যান্ডস প্রাসাদটি মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ কিনে নেন। এরপর থেকে এই প্রাসাদটির সাথে কুচবিহার রাজ্যের ইতিহাস জুড়ে গেল। এই উডল্যান্ডস্ প্রাসাদ কলকাতার আলিপুরে অবস্থিত ছিল।

উডল্যান্ডস প্রাসাদ কুচবিহার

Woodlands Palace Calcutta

উডল্যান্ডস প্রাসাদ ও নৃপেন্দ্র নারায়ণ / Woodlands Palace and Nripendra Narayan 

মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর এর জ্যেষ্ঠ কন্যা, রাজকুমারী সুকৃতি দেবীর বিয়ে হয়েছিলো মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা স্বর্ণকুমারী দেবীর কৃতি পুত্র জ্যোৎস্নানাথ ঘোষাল এর সাথে। জাঁকজমকপূর্ণ বিবাহ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল এই উডল্যান্ডস প্রাসাদেই (Woodlands Palace)। 

১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর এর এ.ডি.সি. এবং গোবরাছড়ার প্রসিদ্ধ জমিদার রায় চৌধুরী সতীশচন্দ্র মুস্তোফীর সাথে রাজকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় এর পৌত্রী ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় এর কন্যা হেমনলিনী দেবীর বিবাহের অনুষ্ঠানটির আয়োজনও এই প্রাসাদেই করা হয় l

আকার আয়তনের সাপেক্ষে তৃতীয় নম্বরে ছিল এই উডল্যান্ডস্ প্রাসাদ, বেলভেডিয়ার হাউস ও ভাইসরিগাল লজএর পড়ে (তৎকালীন কলকাতার বুকে) । ১৯৩০ এর দশকে আধুনিকতার নিরিখে প্রথমেই ছিলো উডল্যান্ডস প্রাসাদ যা অনেকে বলে থাকেন। কলকাতার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই প্রাসাদটির চত্বরে ছিলো প্রশস্ত বাগান, খেলার মাঠ, ভৃত্যদের থাকবার জন্য আলাদা বাসঘর, আস্তাবল, মোটর গ্যারেজ ইত্যাদি। কলকাতায় ব্যবহারের জন্য অন্যান্য গাড়ির সাথে মহারাজার একটি রোলসরয়েসও এখানে রাখা থাকতো। উডল্যান্ডস প্রাসাদের প্রবেশ পথে ছিলো কুচবিহার রাজপ্রতীক খচিত প্রকান্ড কাস্ট আইরন এর ফটক। মহারাণী ইন্দিরা দেবী পরবর্তী কালে বহু যত্নে এই প্রাসাদটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছিলেন। এই প্রাসাদেই একসময় তাঁর শোবার ঘরে সাজানো ছিলো বিখ্যাত হাতির দাঁতের পালঙ্ক। 

মহারাণী ইন্দিরা দেবীর উদ্যোগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের জন্য কিছু অর্থসংগ্রহ করবার প্রচেষ্টায়  একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো এই প্রাসাদ প্রাঙ্গনে। 

উডল্যান্ডস প্রাসাদ ও শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব / Woodlands Palace and Sri Ramkrishna Paramhansadev

বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির সমাগম হয়েছিল এই প্রাসাদটিতে একসময়। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এর মানসপুত্র স্বামী ব্রহ্মানন্দ জী মহারাজ ও মহাত্মা গান্ধী এই প্রাসাদে এসেছিলেন। 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মহারাজার  অনুমতি অনুসারে আমেরিকান সেনাদের একটি আপদকালীন হাসপাতালে পরিণত হয় এই প্রাসাদ। 

উডল্যান্ডস প্রাসাদ বিক্রি / Selling Woodlands Palace

আর্থিক অনটনে পড়ে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর (Maharaja Jagaddipendra Narayan) উডল্যান্ডস প্রাসাদের কিছু জমি বিক্রি করবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই মহা মূল্যবান সম্পত্তিটি বিক্রির গুরুদায়িত্ব নেন নেপাল এর রাজা রা। জানা যায় মহারাজা এই রাজা-দের কর্তৃক প্রতারিত হয়েছিলেন এবং তাঁর প্রাপ্য অর্থ তিনি কোনো দিনই ঠিকঠাক ভাবে ফেরত পান নি।  

উডল্যান্ডস হসপিটাল / Woodlands Hospital

উডল্যান্ডস প্রাসাদটির মধ্যেই একটি বেসরকারী হাসপাতাল হয়েছিলো কিছুকাল। পরবর্তীতে প্রাসাদটি ভেঙ্গে বহুতল নির্মিত হয়। বর্তমানে উডল্যান্ডস প্রাসাদ অঞ্চলেই দাঁড়িয়ে রয়েছে আলিপুর এস্টেটস (Alipur Estates), কোঠারি হসপিটাল (Kothari Hospital) , উডল্যান্ডস নার্সিংহোম বা হসপিটাল (Woodlands Hospital), কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় এর আবাসন ইত্যাদি। 

সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও এখনও ওই এলাকাটি উডল্যান্ডস বলেই পরিচিত। স্মৃতি বলতে শুধু প্রাসাদের কিছু পরিত্যক্ত কাস্ট আইরন এর ভেঙ্গে থাকা রেলিং এর সারি কখনো সখনো চোখে পরলেও পড়তে পারে। 

References

A princes Remembers – Gayatri Devi

The Autobiography of an Indian Princess – Sunity Devi