Koch Rajbanshi Herbal Medicine
সরল সাদাসিধা কোচ রাজবংশীদের (Koch Rajbanshi) আগে বিশ্বাস ছিল যে অপদেবতার বা দ্যাওয়ের কুনজরের জন্যই রােগ-ভােগ দেখা দেয়। এখন অবশ্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির কারনে মানুষ হাসপাতাল মুখী হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে সাপ কামড়ালেও ওঝা দিয়ে যদি কোনো কাজ না হত মৃতপ্রায় রোগীকে ভেলায় ভাসাতে দেখা যেত। কলেরা, জলবসন্ত, হাম প্রায় সব রোগের ক্ষেত্রে অদৃশ্য আত্মার প্রভাবে ঘটে থাকে এবং কেবলমাত্র তাদের সন্তুষ্টির মাধ্যমেই রােগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাধারন ভাবে এই বিশ্বাস সত্ত্বেও গ্রামের মানুষেরা কোনও কোনও রােগ প্রতিরােধ ও নিরাময়ে গাছ-গাছড়ার প্রতিষেধক গ্রহণ করেন থাকেন।
৫০-৬০ বছর আগেও গ্রামীন কোচ রাজবংশী সমাজে যেসব টোটকা প্রচলিত ছিল তার কিছু নমুনা হল -
সর্দি-কাশিতে ন্যাকড়ায় হলুদ বেঁধে গলার সঙ্গে সুতাে দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শিশুর
মা’র বা পোয়াতির রাত্রে ভাত খাওয়া বারণ।
পুড়ে গেলে কাচা আলু থেঁতাে করে পােড়া জায়গায় লাগাতে হয়। হেমকটসা (পাথরকুচি) পাতা থেঁতাে করে লাগালেও ফল মেলে।
মাথা ব্যথা হলে কাচাকলা ছােট করে কেটে তার সঙ্গে লেবু, মধু এবং লবণ মিশিয়ে লেই তৈরি করে কপালে প্রলেপ দেওয়া হয়।
জ্বর হলে জলপড়া করা হয়। গ্রামীন ওঝা এই জলপড়া দিত।
হাত পা ভেঙে গেলে তেল-পড়া দেওয়া হয়। বলা হয়, এতে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ভাঙা জোড় লাগে। তুফানগঞ্জ বিলসীর চিকাতু রোজা এই তেল পড়া দিতেন। নিশিগন্জের হাড়া ভাঙা বৈদ্য বিখ্যাত। দূর দূরান্ত থেকে রোগী এখানে আসে চিকিৎসা করানোর জন্য।
পেটে ব্যথা করলে একটি বিশেষ ধরনের ঘাস (কেল্লা ঘাস)-এর কন্দ থেঁতাে করলে রস
বেরােয়, এর সঙ্গে আদা আর লবণ মিশিয়ে ঈষৎ উষ্ণ অবস্থায় মুখে নিতে হয়।
কলেরা হলে চন্ডী পূজা পূজা করা হত। এখনো অনেক জায়গায় চন্ডী ঠাকুরের পাট দেখা যায়।
জলবসন্ত বা গুটিবসন্তে (গুটি পুসকোরা) তেলপড়া বা জলপড়া দেওয়া হয়।
ডায়রিয়া হলে জলে মুড়ি ভিজিয়ে সাদা ধূপ আর লবণ মিশিয়ে চুমুক দিয়ে খেতে হয়।
ছােট আকারের অনেক বিচিযুক্ত কলা (আটিয়া কলা) পুড়িয়ে, জল দিয়ে চটকে, সামান্য লবণ মিশিয়ে চুমুক দিয়ে খেতে হয়।
ঘা বা আলসার হলে ‘কেসরাই ঘাস’ এবং ‘ভােমরা-সিটা’র শিকড় সরষের তেলে সেদ্ধ করা হয়। এই তেল রক্তপড়া বন্ধ করে এবং ঘা শুকোতে সাহায্য করে। ঘা বড় হলে একটা ছােট কাঁচা সুপারি দাতে ভেঙে ফোটানাে তেলের সঙ্গে মেশানাে হয়। কখনও কখনও সমস্ত ভেষজ গাছটিকে তেলে সেদ্ধ করে লাগানাে হয়।
কোচ রাজবংশী গ্রামীণ ভেষজ ঔষধ
সাপ কামড়ালে -
(১) কামড়ানাে জায়গার ওপরে এবং চারপাশে কেঁচো খোঁড়া এক খাবলা মাটির প্রলেপ লাগিয়ে ওঝাকে ডাকা হয়। এই প্রলেপে সাপের বিষ ছড়িয়ে পড়তে পারে না।
(২) রুগির নাকে দুলফি বা কানসিসা পাতা ( দণ্ডকলস)-র রস দেওয়া হয়।
পাগলা কুকুর আর শেয়াল কামড়ালে সাধারনত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন উপযুক্ত ওঝাকে ডাকা হত।