পাটোয়ারী বাড়ি – ঐতিহাসিক স্থাপত্যটি আজ ধ্বংসের মুখে। Patowari House – Earlier Coochbehar State
প্রাচীন স্থাপত্য ও নিদর্শন সমৃদ্ধ কুচবিহার জেলায় উঁকি দিলেই বেরিয়ে আসে ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্নের ডালি। তারই নিদর্শন কুচবিহার জেলার (অতীত কুচবিহার রাজ্য) মাথাভাঙা মহকুমার (২নং ব্লক) উনিশবিশা অঞ্চলের শিলডাঙ্গা গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ি (Patowari House – Mathabhanga, Coochbehar)।
এই নিদর্শন সমৃদ্ধশালী ইতিহাস সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি বা এর পিছনে কি ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে,আমরা কতটা অবগত ? আমরা কি শুধু হেরিটেজ তকমাতেই খুশি। যদিও হেরিটেজ ঘোষণা হয়েছে কুচবিহার শহরকে, সমস্ত জেলাকে নয়। State Heritage Committeeতে উত্তরবঙ্গের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। অতএব আমাদের ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদেরই সর্বাঙ্গীন প্রচেষ্টা করতে হবে।
পূর্বের কালীগঞ্জ (মাথাভাঙার পূর্ব নাম) বর্তমান মাথাভাঙ্গা মহকুমায় অনেক জমিদার, জোতদার বা ধনবান ব্যক্তি ছিলেন। অনেকে সরাসরি রাজপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী ছিলেন, আবার অনেকে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে রাজ্য পরিচালনায় মহারাজাদের সহায়তা করতেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খা চৌধুরী আমানতুল্লাহ আহমেদের পরিবার, আনসার উদ্দিন আহমেদের পরিবার ,মাধবরাম কার্জীর পরিবার, তরফদার পরিবার, ভট্টাচার্য পরিবার, ধনবর পাটোয়ারী পরিবার ও আরো অনেক জমিদার ও জোতদার। তাদের মধ্যে একজন অন্যতম জোতদার ছিলেন ধনবর পাটোয়ারী ( Dhanbar Patowari)।
এলাকার বিত্তশালী ও জমিদার হিসেবে তাদের খুব নাম ডাক ছিল। প্রজা, দ্বাররক্ষী, কর্মচারী সবই ছিল তাদের। পোড়া ইটের তৈরি খিলান যুক্ত ছাদ বিশিষ্ট ঘর ছিল পাটোয়ারীদের। এই ঘরগুলিতে পরিবারের লোকেরা থাকতেন। আবার শোনা যায় এই বাড়িতেই মহকুমার কাছারি (?)বসত। সোজা কথায় রাজস্ব/খাজনা সংগ্রহ করা হত।১৫০-২০০ শতাধিক প্রাচীন এই বাড়ির পাশাপাশি তৈরি হয় দেবালয়। সেখানেও নিয়মিত পূজা হতো। দেবী দুর্গা পূজার সময় এই মন্দিরে মহিষ, কবূতর ও পাঠা বলি হত। সময়ের ব্যবধানে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভূমিকম্পে কিছু বিল্ডিং ধ্বংস হয়ে গেলেও বতর্মান এই পাটোয়ারী বাড়িতে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর দেখা যায়। এই তিন কক্ষ বিশিষ্ট ঘর ছাড়াও রয়েছে দেবী মন্দিরে ভগ্নদশা একটি ভাঙা দেওয়াল। কুচবিহারের মহারাজারা (?) মাথাভাঙ্গা পরিদর্শনে আসলে এই বাড়িতে আসতেন বলেও লুকোমুখে শোনা যায়।
কুচবিহারের পুরানো বাড়ি – পাটোয়ারী বাড়ি
এই মহকুমার শেষ নায়েব আহিলকার ও প্রথম মহকুমা শাসক ছিলেন হেমন্তকুমার রায় বর্মা (Bhupali Roy দিদির বাবা)।
ইতিহাসের অনেক সাক্ষী এই বাড়িটির এই ভগ্নদশা অনেকের মত আমাকেও মর্মাহত করে। বাড়িটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করে যদি সংগ্রহশালা হিসেবে পরিণত করা যায় তাহলে খুব ভালো হয়। সরকারিভাবে বা বেসরকারিভাবে, অবশ্যই পরিবারের লোকেদের মতামত নিয়ে এই কাজটি করলে ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।
এই বাড়ির বিস্তারিত ইতিহাস জানার ও বাড়িটিকে দেখার আগ্রহ রইলো আমার। সময় ও সুযোগ হলেই যাব।
ছবিঋণ:- রাজবংশী সৌরভ ভাই।
এই বাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত যদি কারো জানা থাকে, অবশ্যই জানাবেন।