ইতিহাস প্রসিদ্ধ প্রাচীন দ্বার আজ গড়কাটা নামে প্রচলিত। Hoko Duar, Kamatapur, Gosanimari
সময়ের বিবর্তনে বা কালের নিয়মে বা অন্য কারণে ইতিহাসের বেশিরভাগ চিহ্নগুলি ধূলিসাত হয়ে গেলেও প্রতীকরূপে দাঁড়িয়ে থাকা নিদর্শনগুলি জানান দেয় তার অস্তিত্বের কথা, তার মাহাত্মের কথা। সুপ্রসিদ্ধ, সমৃদ্ধ প্রাচীন কামতাপুরের (গোসানিমারির) প্রাচীন “হোকো দুয়ার” (Hoko Duar, Gosanimari / or Hoko Duor) এখন শান্তনা রূপে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক কিছুই উসকে দেয়। একদা বিশাল দুর্গ ও রাজধানীর দুয়ার বা গড় আজ অবহেলিত। শুধু কি তাই, পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে এই দুয়ারের নাম।হোকোদুয়ার আজ পরিচিত মাল্লিরহাট গড়কাটায়। এটা কতটা সঙ্গত বা যুক্তিযুক্ত?
বংতি নদী থেকে বউটি নদী
অতীতকালের মানুষের জীবন যাপন, খাদ্যাভ্যাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, অতীতকালের কথা বা ইতিপূর্বে কি ছিল, তাই নিয়েই তো ইতিহাস।আর প্রচলিত কথ্য নামের মাধ্যমে যদি এভাবে ইতিহাস হারিয়ে যায় তাহলে সমাজ, জাতি বা কারো পক্ষে এটা সুখের নয়। ইতিহাস বাঁচলে, আমরা বাঁচবো। নামের মাহাত্ম্যের ইতিহাসও বাঁচিয়ে রাখা জরুরী। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এরকম অনেক প্রসিদ্ধ জায়গার নামই তার মাহাত্ম্য হারিয়ে ফেলছে। মূল নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে প্রচার করা হচ্ছে বা নতুন নামে দেওয়াল লিখন হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বানেশ্বর এলাকার একটি নদীর নাম “বংতি”, তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় লেখা হচ্ছে “বউটী নদী”।এরকম নাম বিভ্রাট জেলা জুড়ে প্রচুর লক্ষ্য করা যায়।
যাইহোক প্রাচীন এই “হোকোদুয়ার” বা গড় নির্মিত হয় পঞ্চদশ শতকের শেষ ভাগে রাজা নীলাম্বরের আমলে। তার পূর্বপুরুষ নীলধ্বজ, চক্রধব্জের আমলেও কামতাপুরের দুর্গের নিরাপত্তাও সুরক্ষিত ছিল। শত্রুপক্ষের হাত থেকে রাজধানী ও দুর্গের নিরাপত্তার জন্য এরকম অনেকগুলি মাটির পরিখা বা গড় নির্মাণ করা হয়। শিলদুয়ার, বাঘদুয়ার, হোকোদুয়ার, জয়দুয়ার, সন্ন্যাসী দুয়ার, ধর্ম্ম দুয়ার, অক্ষয় দুয়ার ইত্যাদি। মাটি দিয়ে নির্মিত এই সুউচ্চ গড় গুলি তৎকালীন সময়ে দুর্গ বা রাজধানীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকারী ছিল। রাজা নীলাম্বরের আমলে কামতাপুরের উন্নয়ন হয় বহু। কামতাপুরের সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগের জন্য অনেক রাজপথ তৈরি করা হয় এবং পথগুলি কাঁচা ছিল। বহু পথ নির্মাণ করা হলেও নদী ভাঙ্গন ছাড়া এই দুর্গ প্রতিরক্ষা দুয়ারগুলির কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু, লক্ষণীয়ভাবে বর্তমানে এই দুয়ারগুলি কেটে ফেলা হয়েছে বহু জায়গায়। যোগাযোগের জন্য গড় কেটে সড়কপথ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি ও চাষের জমি। এভাবেই প্রাচীন কামতাপুর রাজ্যের দুয়ারগুলি ক্রমান্বয়ে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে।হারিয়ে যাচ্ছে তার ইতিহাস, তার গৌরবগাথা। এগুলিকে রক্ষা করা কি যায় না?
বর্তমান হোকোদুয়ারের অবস্থান গোসানিমারি থেকে চান্দামারীর রাস্তায় মাল্লিরহাট (Mallir Hat) এলাকায় পড়ে। মাল্লিরহাট এর নামকরণের পিছনেও হয়তো কোন ইতিহাস আছে। “মাল্লি” কথার অর্থ জমির সীমারেখা বা এর উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছোট পথ। আবার “আলী” কথার অর্থ জমির সীমারেখা ও পায়ে হাঁটার পথ। এরকম একটি প্রাচীন পথ আছে যার নাম “গোহাই কমল আলী”। গোহাই কমল মহারাজা বিশ্বসিংহের পুত্র ও মহারাজা নরনারায়ণের ভাই এবং তিনি কাছাড় খাসপুরের রাজাও ছিলেন। ইতিহাসের অনেক নিদর্শন ও অজানা ইতিহাসের যোগসূত্র ও সূত্র থাকলেও এর অনেক কিছুই জানার বাকি। আমিও জানতে আগ্রহী।