করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি
আমাদের দেহ কোনও ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হলে, স্বাভাবিক ভাবে তখন আমাদের দেহ রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য অ্যান্টিবডি নামে একটি বিশেষ প্রোটিন তৈরি করে।
COVID-19 মহামারী বন্ধ করার জন্য যারা গবেষণা করছেন এমন বিজ্ঞানীরা মনে করেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করতে কোন অ্যান্টিবডি সবচেয়ে শক্তিশালী তা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে এবং তারপরে কৃত্রিম ভাবে ঐ প্রোটিনগুলির অনুলিপি তৈরি করা সম্ভব হবে।
মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির উপর গবেষণা
ক্যান্সার বা বাতের মত অনেক রোগের ক্ষেত্রে এইরকম মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরী করে রোগ প্রতিরোধে তার কার্যক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে
DARPA (Defence Advanced Research Project Agency) এইরকম একটা প্রজেক্ট চালু করার জন্য সমর্থন জানিয়েছে যাকে পিপিপি (Pandemic Prevention Platform) নাম দিয়েছে। 90 দিনের মধ্যে এই প্রোজেক্ট শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে করোনা ভাইরাসের মত জৈবিক হুমকি কে নিশ্বেষ করা প্রয়াস চালু করেছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহেই গবেষনা চালু হয়ে গেছে।
প্রথম ধাপে বিশেষ অ্যান্টিবডি তৈরী করা হবে যা করোনা ভাইরাসকে ডিটেক্ট করতে পারে। পরের ধাপে দেখা হবে ঐ অ্যান্টিবডি গুলো কোষে (প্রথমে ল্যাব এ) সংক্রমণ করতে করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে কিনা। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং খুব শীঘ্রই শেষ হবে।
যদি ঐ অ্যান্টিবডি গুলো কোষগুলোকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে তবে গবেষকরা পরবর্তীতে অন্য প্রানীর উপর (করোনা ভাইরাস সংক্রমণ করিয়ে) পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে, দেখবে প্রানীরা সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা না আরো দূর্বল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে জেনেটিকালি মডিফায়েড ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করা হবে কারণ সাধারন ইঁদুরের উপর করোনা ভাইরাসের এফেক্ট অতটা কার্যকর নয়, হয়ত এজন্য সময় বেশী লাগতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন।
চীনা গবেষকরা অবশ্য বাদর কে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ করিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। যদি এই গবেষণা সাফল্যমন্ডিত হয় পরবর্তীতে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির প্রোডাকশন চালু করা শুরু করবে। তাছাড়া প্রানীর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় যদি কোনো ড্রাগ (medicine) ইতিবাচক ফল দেয় কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই তবুও মানুষের উপর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো বিস্তারিত গবেষনার প্রয়োজন FDA অ্যাপ্রোভাল পাওয়ার জন্য। DARPA ডিরেক্টর মিসেস জেনকিন্স বলেছেন, যে মানুষটি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রিকোভার করেছে তার অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা করা হলেও সেই ব্যাক্তির অ্যান্টিবডি যে সব থেকে শক্তিশালী হবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে – প্রশ্ন থেকেই যায়। শুধুমাত্র একজন রোগীর অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা চালানোটা রিস্ক এর ব্যাপার আবার অনেক মানুষ কে নিয়ে আগানোটাও কঠিন কাজ।
এব্যাপারে অবশ্য বীর বায়োটেকনোলজি নামে এক সংস্থা কাজ করছে, তারা ইতমধ্যে 100 জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে অ্যান্টিবডি টেস্ট করছে এবং আশা রাখছে 1 মাসের মধ্যে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরী করতে সক্ষম হবে।
অন্যদিকে Regeneron নামে এক বায়োটেকনোলজি কোম্পানি মানুষের অ্যান্টিবডি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার সহমত প্রশন করে শুধুমাত্র মানুষের উপর ভরসা না করে একধরনের বিশেষ ইঁদুর কে নিয়ে গবেষনা করছে যাদের ইমিউন সিস্টেম প্রায় মানুষের মতনই। ইতিমধ্যে 100 র বেশী অ্যান্টিবডি নমুনা ওরা সংগ্রহ করেছে। Regeneron সংস্থার কাছে এমন একটি ঔষধ আছে যা বাতের জন্য কার্যকরী এবং তারা মনে করছেন ঐ ঔষধ করোনা ভাইরাস জনিত নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রেও কার্যকরী হতে পারে। যদি এই ঔষধ (ড্রাগ) ঠিকঠাক কাজ করে তাহলে পরবর্তীতে অ্যান্টিবডি – ড্রাগ কম্বিনেশন করে ট্রিটমেন্ট করা যেতে পারে।
এই অ্যান্টিবডি ড্রাগ কম্বিনেশন একদিকে ভাইরাসকে প্রতিরোধ করবে অন্যদিকে ফুসফুসকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করবে।
# Monoclonal Antibody # Coronavirus disease # Genetically modified Mice # Regeneron biotech