ভক্তিশ্বরের স্বর্গে গমন থাকি কান্তনাথের দাসত্ব মোচন। Kamatapuri Literature - Gosanimangal

VSarkar
Bhaktishwarer swarga gomon

কামতাপুরী সাহিত্য – গোসানী মঙ্গল

[ ভক্তিশ্বরের স্বর্গে গমন]

ছয় বচ্ছর কান্তনাথ হইল যখন ।

দৈবে বিধির পাকে হইল ঘটন ॥

যম কহে চিত্রগুপ্ত করহ বিচার

কত পাপ পুণ্য য়ায় আছে ভক্তি-শ্বর। ৬১

চিত্রগুপ্ত কহে রাজ কর অবধান

ভক্তিশ্বর সমধর্ম্মী নাই কোন জন।

ভূত চতুদ্দর্শী পালে দুর্গা অষ্টমী।

শিব রাত্রি পালে আর জয়ন্তী অষ্টমী॥ ৬২

শুক্ল পক্ষ কৃষ্ণ পক্ষ অষ্টমী পাইয়া।

উপবাস জাগরনে পূজে পুষ্প দিয়া ॥

য়েকাদশী ব্ৰত আদি যত তিথি পায়।

ব্ৰত উপবাসে পূজে হর হরি পায়। ৬৩

পুণ্যবান ভক্তিশ্বর আয় নাই তারে।

আজি ভক্তিশ্বর দিবে। তােমার গােচরে ।।

য়েক দুত পাঠাইল জামবাড়ী নগর

যথা আছে পুণ্যবান নাম ভক্তিশ্বর। ৬৪

ভােজনের পর তার গায়ে আইল জ্বর।

দুতে ধরি নিল প্রাণ ছাড়ে ভক্তিশ্বর ।

হরি হরি বুলি প্রাণ তেজিল যখন ।

দুতে নিয়া দিল তাকে যম বিদ্যমান। ৬৫

পুণ্যবান দেখি যমে পুণ্য স্থানে দিল ।

য়েই মতে ভক্তিশ্বর ইন্দ্রপুরে রৈল।।

স্বামীর কারণ কান্দে অঙ্গনা কান্তনা।

হায় বিধি ডাকাতিয়া বুকে দিল হানা। ৬৬

মায়ে পুতে গলাগলি কান্দে হুমাহুমি।

কেন বিধি বিড়ম্বিলা না মরিল আমি ।॥

অসার সংসার দেখ জীবন চঞ্চল ।

ভনে কবি রাধাকৃষ্ণ গােসানী মঙ্গল।॥ ৬৭

[ অঙ্গনার বিলাপ ]

কান্দে বালি অঙ্গনা হায় বিধি দিলা হানা

মাের দুখ ললাট লিখন

পাইয়া চণ্ডীর বর হইল মোর পুত্র বর

বিধি তারে কৈল বিড়ম্বন । ৬৮

মনে যত আশা ছিল সবে হরি কাড়ি নিল

হরি মাের হৈল দুখ দশা

হরি হরি নারায়ণ সেবি তার শ্রীচরণ

মোর না পুরিল আশা ॥ ৬৯

স্বপ্নে কহে নারায়ণী শুন অঙ্গনা অভাগনী

পুজা কর দিব ধনবর।

করহ আমার পুজা তাের পুত্র হবে রাজা

বর দিলাে হইবে অমর ॥ ৭०

চণ্ডীর চরণ পূজি ধন বর নিল খুঁজি

চণ্ডী বরে পাইলাে পুত্রবর।

ষষ্টি বচ্ছর হৈল তাহে বিধি বাম কৈল

মাের পতি মরে ভক্তিশ্বর ।। ৭১

হায় রে বিধির নাটে পাষানের বুক ফাটে

দেবতাও মিথ্যা কথা কয়।

রাজা হৈতে বর দিল চণ্ডী বাক্য ব্যর্থ হইল

আর কি রাজা হয় বিধুয়া তনয়।। ৭২

বিলাপ করিয়া কান্দে পড়িয়া সন্কট ফান্দে

শির কুটি মাথে দিয়া হাত।

পড়িয়া ধরনী তলে হা হা হরি হর বােলে

আর্তনাদে কান্দে কান্তনাথ ।। ৭৩

মায়ে পুতে ধর্য্য ধরি আনে ত্রিন্ন কাষ্ঠ খড়ি

চন্দনাদি ঘৃতেতে দক্ষীল।

পুরহিত পদে ধরি চিতা উচর্গন করি

ক্ষেত্রীর বিধানে পীণ্ড দিল ।৷ ৭৪

যেন জল বিন্ব পশি জল মধ্যে যায় ভাসি

জীব যেন পদ্ম পত্র জল

নারায়ণ নাম ধরি অন্তে যাহ বিষ্ণুপুরি

সুমধুর গােসানী মঙ্গল ৷ ৭৫

[ পয়ার ]

অঙ্গনা কহে হরি হরি ললাট লিখন

আপন অদৃষ্ট দুখ না হয় খণ্ডন ।

কান্তনাথ বােলে মাও না কর ক্রন্দন।

সকলে করিতে পারে দেব নারায়ণ ॥ ৭৬

অঙ্গনা কহে বাপু হইল দুখুনী।

ধন পুত্র বর মোক দিয়াছে ভবানী॥

জামবাড়ী নগরে বাপু তুমি হবা রাজা।

চণ্ডী মােক বর দিল কৈল চণ্ডী পুজা। ৭৭

রাজা না হইলা বাপু ব্যর্থ হইল বর।

মাের স্বামী মরে তাের পিতা ভক্তিশ্বর ।

য়েই দু:খ মাের না যায় সহন।

কি মতে হইবা আর ভরন পােষন । ৭৮

[ কান্তনাথের দাসত্ব]

মায়ে পুত্রে আলাপেতে রাত্রি অবসান

য়েই মতে কতদিন আছে দুই জন।।

প্রভাতে গ্রামের য়েক আইল ব্রাহ্মণ

বিশ্বাসিয়া কহে কথা অঙ্গনার স্থান।। ৭৯

শুন শুন অঙ্গনা ব্রাহ্মণের কথা

প্রভাতে ব্রাহ্মণের বাক্য না কর অন্যথা।

প্রণমিয়া অঙ্গনা দিল বিপ্রেক উত্তর

কি হেতু আইলা য়েথা কহ দ্বিজবর ॥ ৮০

দ্বিজ কহে শুন কহি আইল যে কারণ ।

বিধবা হইলা তুমি নহিক রক্ষণ।।

তেনমত লােকহীন হইল অমারে।

হিতেহিত হবে আইলাে তােমার গোচরে৷ ৮১

কান্তনাথ লইতে চাই তােমার ছাওয়াল ।

মোর গৃহে হইবেক গাভীর রাখাল ৷

অন্ন বস্ত্রে প্রতিপাল করিব তেমার।

সন্ধ্যা হইলে আসিবেক গৃহে আপনার ॥ ৮২

অঙ্গনা কহে ঠাকুর তুমি উত্তম কহিলা।

উপযুক্ত কথা কিন্তু দুগ্ধের ছাইলা ॥

জিজ্ঞাসিয়া চাই আগে পুত্রের গােচর।

গাভি চড়াইতে পারে লও দ্বিজবর ॥ ৮৩

হেন শুনি কান্তনাথ দিলেন উত্তর ।

চড়াইব গাভি মা নাই কোন ডর ॥

য়েত শুনি অঙ্গনা আনন্দিত হইল ।

ব্রাহ্মণের স্থানে কান্তনাথ সমর্পিল । ৮৪

য়েই মতে কান্তনাথ ব্রাহ্মণের ঘরে

গাভি চড়াইয়া ফিরে বনের ভিতরে ।।

দিনে ব্রাহ্মণের গৃহে কার্য্য নিবর্ত্তন ।

সন্ধ্যা হইলে মাতৃ গৃহে করে আগমণ ॥ ৮৫

[ কান্তনাথের দাসত্ব মােচন ]

য়েক দিন কান্তনাথ গাভীগণ সনে।

কৌতুক করিয়া ফিরে বন উপবনে।

বন হইতে গাভীগণ করিল বাহির ।

বৃক্ষের ছাঞাতে গাভী করিল সুস্থির ॥ ৮৬

বৃক্ষের নিকট য়েক আছে সরবর ।

ধেনু বচ্ছ তাহাতে জল খাইল বিস্তর।।

সুস্থ হইয়া গাভিগণ বাথান ধরিল

সুশীতল দেখি কান্তনাথ নিদ্রা গেল ॥ ৮৭

বস্ত্র পাড়িয়া কান্তনাথ নিদ্রা গেল।

কৈলাশে থাকিয়া তাহা ভবানী দেখিল॥

চণ্ডী কহে শুন পদ্মা কর অরধান

শীঘ্ৰ দুই নাগ পাঠাও কান্তনাথ স্থান।। ৮৮

হেন শুনি পদ্মা দুই নাগ পাঠাইল ।

কান্তনাথ উপরত ফনি ধরি রইল ।।

নিদ্রা গিছে কান্তনাথ নাহিক চেতন।

গাভীগন ঘরে আইল বেলি অবসান॥ ৮৯

ধেনু বচ্ছ ঘরে আইল সন্ধ্যা পরবেস ।

কান্তনাথ নাহি কেন না বুঝি বিশেষ ।

দুই দণ্ড রাত্রি হৈল তবু না আসিল।

বিধুবার পুত্র বুঝি বাঘে ধরি খাইল ॥ ৯০

বাঘে ধরি খায় কি বা ভালুকেত মারে।

হস্তী মারিল কি বা খায় অজগরে ।।

মনেতে ভাবিয়া বিপ্র স্মরে দুর্গানাম।

কান্তনাথ মৈলে অঙ্গনার যাবে প্রাণ।। ৯১

কি জানি ছাইলা বুঝি মায়ের কাছে গেল ।

সাত পাঁচ ভাবি বিপ্র বাহির হইল।।

যেইদিকে গাভীগণ করিছে চারণ।

ধীরে ধীরে বিপ্র তথা করিল গমন ॥ ৯২

আচম্ভিতে দুই সর্প দেখে বটতলে ।

মস্তক উপরে তার যেন অগ্নি জ্বলে।।

কান্তনাথ পড়ি আছে ভূমির উপর।

সর্পে বেড়িয়া ধরে দেখি ভয়ঙ্কর ৷ ৯৩

য়েই সর্পে খাইল বুঝি অঙ্গনা তনয়।

মনেতে ভাবিয়া বিপ্র পালাইয়া যায ।।

পুর্ণব্বার ফিরে বিপ্র কি করি উপায়।

কান্তনাথ খাইল নাগে বােলে হায় হায়।৷ ৯৪

নিরক্ষণ করি বিপ্র আছে কতক্ষন ।

শ্রী দুর্গা বলিয়া কান্ত পাইল চেতন ।।

জাগি উঠে কান্তনাথ নাগ পলাইল।

দেখিয়া বিপ্রের মনে বিস্ময় হইল ।॥ ৯৫

চমৎকার হইয়া ঘরে গেল দ্বিজবর

য়েথা কান্তনাথ মনে হইল ফাঁপর

কাল নিদ্রা হৈল মাের গাভী কোথা গেল

কার ধান খাইল কি বা সেই ধরি নিল।। ৯৬

নিদ্রায় হারাইল গাভী করেন ক্রন্দন ।

গাভীর কারণে মােক বধিবে ব্রাহ্মণ।।

কান্দিতে কান্দিতে গেল ব্রাহ্মণের ঘরে।

আলঙ্গিয়া বিপ্র আসি কান্তনাথ ধরে॥ ৯৭

না কান্দ না কান্দ বাপু শুনহ বচন

আপনে আসিছে মাের গৃহত গােধন ।

য়েত শুনি কান্তনাথ সুস্থির হইল

বিপ্রের চরণ ধরি প্রণাম করিল।। ৯৮

তথা হইতে মাতৃ গৃহে করিল গমন।

গাভীহারা যত কথা করে নিবেদন ॥

শুনিঞা অঙ্গনা মনে বিস্ময় হইল।

কোলে করি কান্তনাথ শিরঘ্রাণ কৈল। ৯৯

নারায়ণ চিন্তা করি রহিল গৃহেতে।

রাত্রি অবসানে বিপ্র আইল প্রভাতে ।।

মায়ে পুতে প্রণমিল বিপ্রক দেখিয়া।

আশীর্ব্বাদ করে বিপ্র মাথে হাত দিয়া॥ ১০০

বিপ্র কহে মাের য়েক শুন নিবেদন

সত্য না করিলে কথা না হয় কথন।৷

কান্তনাথ কহে ঠাকুর সত্য কৈল আমি।

নিসন্দে মম কথা য়েরে কহ তুমি॥ ১০১

অঙ্গনা কহে পুত্র হেলা না করিবা

প্রাণাধিক করি বিপ্র হিতক চিন্তিবা।।

কান্ত কহে মাও না বুলিহ মােরে

প্রাণ যদি চাহে মাের দিব দ্বিজবরে।।১০২

এত শুনি আনন্দে কহে দ্বিজবরে

তুমি যদি রাজা হও পালিহ আমারে।।

মাের স্থানে মন্ত্রী তুমি করিবা গ্রহণ

রাজগুরু বুলি মােকে ঘােষে সর্ব্বজন।। ১০৩

কান্তনাথ কহে গুরু করিব তােমারে।

এই রাজ্যে রাজা যদি হই তব বরে ।।

প্রণমিল কান্তনাথ দ্বিজে বর দিল

ব্রাহ্মণের ঘরে কান্ত পূর্ব্ববতে রৈল ।। ১০৪

বিপ্র কহে কান্তনাথ ছাড় গােচারণ।

বসিয়া পাইবা অন্ন বস্ত্র আভরণ ॥

তবু কান্তনাথ নাহি ছাড়ে গােচারণ।

সেই মতে বিপ্র গৃহে আছে কতদিন।। ১০৫

চণ্ডীর বরে দশা প্রসন্ন যে হইল।

গরু ছাড়ি কান্তনাথ মাতৃ-গৃহে গেল ॥

দেখহ চণ্ডীর মায়া কে বুঝিতে পারে ।

কি মতে আসিয়া চণ্ডী বর দেয় তারে।। ১০৬

ধনবর পুত্রবর চণ্ডী পুজি পায়।

করহ চণ্ডীর পুজা পাইবা নিশ্চয়।।

অঙ্গনা পাইয়া পুত্র আনন্দে বিহবল।

ভনে কবি রাধাকৃষ্ণ গােসানী মঙ্গল।। ১০৭


(ক্রমশ…… Please follow this website)

1 / 2 / 3 / 4