মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ এর সাহিত্যকীর্তি। পর্ব - ২

VSarkar
harendranarayan literature

পর্ব – ২

মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ এর পন্ডিতসভা ও সাহিত্যকীর্তি 

[Literary works of Maharaja Harendranarayan - Coochbehar State] 

মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ এর রাজসভায় পন্ডিতগণ

কালীচন্দ্র লাহিড়ী

জয়নাথ মুন্সী তাঁর “রাজোপাখ্যান” নামক কোচবিহারের ইতিহাস রচনা শুরু করেন মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের মহামন্ত্রী কালীচন্দ্র লাহিড়ীর নির্দেশে। 1821 খ্রীষ্টাব্দে কালীচন্দ্র লাহিড়ী কোচবিহার রাজ্যের দেওয়ান নিযুক্ত হন, পরের বছরেই তাঁর পিতা মহামন্ত্রী রাধাকৃষ্ণ লাহিড়ীর বিদায়ের পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়। অনুমান করা হয় যে 1823 খ্রীষ্টাব্দে “রাজোপাখ্যান” রচনা শুরু হয়েছিল।

কাশীকান্ত শর্মা

কাশীকান্ত শর্মার কয়েকখানি পুথি কোচবিহার সাহিত্যসভার সংস্কৃত পুথিতালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একটি পুথিতে রামায়ণ কিস্কিন্ধ্যাকান্ড অবধি রয়েছে। পুথিতে কোনো রচনাকাল বা ভণিতা নেই তবে পুথির উপর “শ্রী কাশীকান্ত শর্মার পুথি” কথাটি আর 1207 সন লেখা আছে। 1207 সন হল 1800 খ্রীষ্টাব্দ। কাশীকান্ত শর্মার নামে একটি সংক্ষিপ্ত ব্যকরণ পুথিও পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো কিছু সংস্কৃত পুথি পাওয়া গেছে ওনার নামে। মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রাজসভার উল্লেখযোগ্য সভাসদ ছিলেন কাশীকান্ত শর্মা। ইনি 1838 খ্রীষ্টাব্দে দেওয়ানী আদালতের বিচারক ছিলেন। মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণের সময়েও তাঁর বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল।

পন্ডিত মাধবানন্দ

মাধবানন্দের ‘চন্ডীমঙ্গল’ পুথির সন্ধান মিলেছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে।

দ্বিজ রুদ্রদেব – মহাভারত আদিপর্ব, রামায়ণ অরণ্যকান্ড।

দ্বিজ পরমানন্দ – মহাভারত বনপর্ব।

দ্বিজ বলরাম – মহাভারত বনপর্ব।

দ্বিজ রমানাথ – মহাভারত বনপর্ব।

দ্বিজ ব্রজসুন্দর – মহাভারত সভাপর্ব, নৃসিংহপুরাণ, কালিকাপুরাণ, রামায়ণ লঙ্কাকান্ড, হিতোপদেশ।

দ্বিজ ব্রজেন্দ্র সুন্দর – হিতোপদেশ।

সাবদানন্দ – ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, রামায়ণ উত্তরাকান্ড, কাশীখন্ড।

সতানন্দ: ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ কাশীখন্ড, রামায়ণ উত্তরাকান্ড।

দ্বিজ রঘুরাম: মহাভারত বনপর্ব, মহাভারত আদিপর্ব, মহাভারত ভীষ্মপর্ব, মহাভারত শান্তিপর্ব, রামায়ণ উত্তরাকান্ড, রামায়ণ অযোধ্যাকান্ড, রামায়ণ কিস্কিন্ধ্যাকান্ড, ক্রিয়াযোগসার ।

দ্বিজ লক্ষ্মীরাম: মহাভারত কর্ণপর্ব, মহাভারত শল্যপর্ব, রামায়ণ অযোধ্যাকান্ড।

দ্বিজ মহীনাথ: মহাভারত বনপর্ব, মহাভারত অশ্বমেধপর্ব, মহাভারত প্রস্থানিকপর্ব, মার্কন্ডেয় চন্ডী।

দ্বিজ বৈদ্যনাথ: মহাভারত বনপর্ব, মহাভারত মৌষলপর্ব, মহাভারত শান্তিপর্ব, কালিকাপুরাণ, শিবপুরাণ, পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ প্রকৃতিখন্ড।

দ্বিজ রামনন্দন: মহাভারত গদাপর্ব, কালিকাপুরাণ, মহাভারত শল্যপর্ব, নৃসিংহপুরাণ, ধর্মপুরাণ।

মাধবচন্দ্র শর্মা: বিষ্ণুপুরাণ, চন্ডিকার ব্রতকথা, মহাভারত স্বর্গারোহণপর্ব।

দ্বিজ রামচন্দ্র: কালিকাপুরাণ।

দ্বিজ কীর্তিচন্দ্র: কালিকাপুরাণ, স্কন্ধপুরাণ, মহাভারত আশ্রমিকপর্ব, ব্রহ্মত্তরখন্ড।

শ্রীনাথ দ্বিজ: রামায়ণ কিস্কিন্ধ্যাকান্ড।

কবিরাজ দ্বিজ রাম: মহাভারত ভীষ্মপর্ব।

দ্বিজ মনোহর: পদ্মপুরাণ।

দেবীনন্দন: রামায়ণ কিস্কিন্ধ্যাকান্ড।

মনোহর দাস: মহাভারত কর্ণপর্ব।

দ্বিজ জগন্নাথ: ভাগবত ষষ্ঠ স্কন্ধ।

মণিরাম দাস: গরুড় পুরাণ।

দ্বিজ দুর্গাপ্রসাদ: গীতাবলী।

দ্বিজ ভূতনাথ: ষড়ঋতু বর্ণনা।

জগতদুর্লভ বিশ্বাস: সঙ্গীতশঙ্কর।

জয়নাথ ঘোষ: রাজোপাখ্যান।

রামনারায়ণ: নলদময়ন্তী উপাখ্যান।

রিপুন্জয় দাস: ক্রিয়াযোগসার।

বিভিন্ন পুথির মধ্যে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রাজসভায় অনেক সভাকবি ও সভাপন্ডিতের নাম পাওয়া যায় কিন্তু তাঁদের রচিত পুথিগুলির কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গের সাথে কোচবিহারের মার্জ হওয়ার পর এখানকার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর হস্তক্ষেপ কলিকাতা পরিচালিত প্রশাসকের হাতে চলে যায়। মোটামুটি 1950 সাল থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে লাইব্রেরী থেকে মুল্যবান পুথি কোনোরকম রেকর্ড না রেখে ব্যক্তিগত কাজে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেগুলি আর ফেরত দেয় নি এরকমও অভিযোগ পাওয়া যায়। কোচবিহারের নীলকুঠি সংলগ্ন পুরাতন লাইব্রেরীর অগ্নিসংযোগ কান্ডেরও হেতুসহ কোনোরকম রিপোর্ট সেইভাবে পাওয়া যাইনি। 

নিচে পর্ব – ১ পড়ার জন্য ক্লিক করুন।

Reference: kochbiharer Rajdorobarer Sahityacharcha/ S. Roy