কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ
[Liiterary Works of Maharaja Harendranarayan, Kamta Literature, Coochbehar State]
মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালকে কামতা সাহিত্যের সুবর্ণযুগ বলা যায়। কোচবিহার রাজ্য বাংলা থেকে তখন পৃথক ছিল। ষোড়শ শতাব্দী থেকে কামতা সাহিত্য চর্চা হত এই রাজদরবারে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ এর রাজসভা মূলত একটি পন্ডিত সভায় পরিনত হয়েছিল। অনুমান করা হয় এত বড় মাপের পন্ডিত সভা সম্ভবত ইতিহাসে আর কোনো রাজসভায় দেখা যায়নি। বাংলা বা আসামের আর কোনো রাজসভায় এত বিপুল পরিমানে মৌলিক রচনা, রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত, পুরাণ, উপপুরাণাদির অণুবাদ হয়েছে বলে জানা নেই। শুধুমাত্র মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রাজসভাতেই অলঙ্কৃত করেছেন 25জন শ্রেষ্ঠ সভাপন্ডিত, যাঁদের মধ্যমণি ছিলেন মহারাজা স্বয়ং। এঁরা কেউ মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণকে জয়দেব কেউ কালিদাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এঁরা সকলেই কেউ কোনো পুথিরচনা একাকী সম্পন্ন করেছেন, কোনো পুথিরচনা যৌথভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া রাজসভার বাইরেও বেশ কিছু পুথি রচিত হয়েছিল এমনও অনুমান হওয়ার কারণ রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে এই সময়কার রাজসভার বাইরে রচিত বেশ কিছু পুথিও বিভিন্ন গ্রন্থাগারে দেখা যায়। 1823 খ্রীষ্টাব্দে রাধাকৃষ্ণ দাসবৈরাগীর বিরচিত “গোসানীমঙ্গল” গ্রন্থখানি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিভিন্ন গ্রন্থাগারে রক্ষিত পুথিসংগ্রহ থেকে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রাজসভার পন্ডিতদের রচনার একটা বিষদ তালিকা তৈরী করা যেতে পারে।
মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ এর সাহিত্যকীর্তি
মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ এর রচনাবলী
গীতাবলী, রাজপুত্র উপাখ্যান, উপকথা (প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড), মহাভারত শান্তিপর্ব, সুন্দরকান্ড রামায়ণ, মহাভারত শল্য পর্ব, মহাভারত ঐশিক পর্ব, মহাভারত সভাপর্ব, মহাভারত খান্ডবদাহন, বৃহদ্ধর্মপুরাণ মধ্যখন্ড, বৃহদ্ধর্মপুরাণ উত্তরাখন্ড, স্কন্ধপুরাণ ব্রহ্মত্তরখন্ড, স্কন্ধপুরাণ কাশীখন্ড, ক্রিয়াযোগসার, হরভক্তিতরঙ্গ।”ক্যাটালোগাস ক্যাটালোগরাম” গ্রন্থে অধ্যাপক যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য রংপুর সাহিত্য পরিষৎ এ মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রচনাবলীর তৃতীয়, চতুর্থ ও পন্চম খন্ড খাতা বাঁধানো আকারে রক্ষিত আছে বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেগুলোর বিষয়বস্তু কি তা তিনি উল্লেখ করেন নি।
মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রাজ্যাভিষেকে অভিনন্দন জানিয়ে ভুটানের ধর্মরাজ কতৃক প্রেরিত পত্র, 1784 খ্রীষ্টাব্দে।
মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের পন্ডিতসভা
কাশীনাথ শর্মার রচনাবলী
কাশীনাথ শর্মা লাহিড়ী মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের খাসনবিস তথা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এবং দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালতের দেখাশুনা করতেন। মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ তাঁকে “বহুদর্শী ও বহুবেত্তা” বলে আখ্যা দিয়েছেন। মহারাজা বলেছেন “খাসনবিস সকল পুরাণ শ্রবণ করিয়াছেন”। ইনি মহারাজার অনুরোধে রাজদরবারে শাস্ত্রপুরাণাদিও ব্যাখা করতেন। দ্বিজ পরমানন্দ তাঁর “মহাভারত বনপর্ব” পুথিতে কাশীনাথ মন্ত্রী সম্বন্ধে কয়েকটি পদ জুড়ে সম্ভ্রমপূর্ণ প্রশংসা করেছেন। কিন্তু বাংলা পুথি সংগ্রহে তাঁর কোনো পুথির সন্ধান পাওয়া যায় নি।
শিবনারায়ণ ন্যায়ালঙ্কার এর রচনাবলী
1797 খ্রীষ্টাব্দে ইনি মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের রাজসভায় ফৌজদারি বিচারকের কাজে নিযুক্ত হন। রামায়ণ উত্তরাকান্ডে এঁর উদ্দেশ্যে একজন শ্রেষ্ঠ সভাকবি হিসাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সারদানন্দ ও সতানন্দ। কিন্তু এঁর রচিত কোনো পুথি পাওয়া যায় নি।
দ্বিজ ব্রজনন্দন মুস্তোফির রচনাবলী
কাশীখন্ড পুথিতে সারদানন্দ রাজসভায় অন্যান্য যে সমস্ত বিশিষ্ট শ্রদ্ধেয় পন্ডিতবর্গের মুখে রাজসভায় কাশীখন্ড ব্যাখা করার কথা জানিয়েছেন তাঁদের মধ্যে দ্বিজ ব্রজনন্দন অগ্রগণ্য ছিলেন। ইনি ছিলেন রাজমন্ত্রী শচীনন্দন মুস্তাফির কনিষ্ঠ পুত্র। কিন্তু এঁর কোনো পুথি আজও পাওয়া যায় নি।
(পরবর্তী পর্বে অন্যান্য সভাকবিদের সাহিত্যকীর্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।)
পর্ব – ২ পড়ার জন্য নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করুন
Reference : কোচবিহারের রাজদরবারের সাহিত্যচর্চা/S.Roy