উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দান করা জমি বেআইনি ভাবে কর্পোরেটের হাতে হস্তান্তর করা প্রসঙ্গে –
উত্তরবঙ্গে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, খেলার মাঠ, ধর্মীয় স্থান, সেনা ছাউনি, এয়ারপোর্ট, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট সহ প্রায় ৮০% জমি দান করেছে কোচরাজবংশীরা (Kochrajbanshi Land donor of North Bengal) । আশ্চর্যের বিষয় সেই জমিদাতাদের নাম পর্যন্ত অস্বীকার করা হয়েছে। জমি দাতাদের নামের পদবী স্কুল কলেজ গুলিতে কৌশলে বাদ দিয়েছে। এরকম অসংখ্য নজির আছে। আবার কোথাও কোথাও ভূমি দাতাদের নামই সম্পূর্ণ বাদ দিয়েছে।
Written by Ramkishore Barman
একটা উদাহরণ দিচ্ছি দার্জিলিং জেলার তরাই অঞ্চলের নেপাল সীমান্ত ঘেঁষা স্থানীয় রাজবংশী ভূমিদাতা বিবেকানন্দ রায়চৌধুরীর (Vivekananda Roychoudhury) প্রদত্ত স্কুলের নাম দেবীগঞ্জ বিবেকানন্দ হাই স্কুল (Debiganj Vivekananda High School)। এখানে ভূমিদাতার পদবী বাদ দিলে স্কুলের নাম স্বামী বিবেকানন্দকে চিহ্নিত করা হয়। অধিকারী কৃষ্ণকান্ত হাই স্কুল (Adhikary Krishnakanta High School) । কৃষ্ণকান্তের পদবী কৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে। পি.ডি. উইমেন কলেজের (P.D. Women College, Jalpaiguri) পুরোনাম প্রসন্ন দেব কলেজ (Prasannadeb College)। এখানেও জোচ্চুরি করে কোচবিহার রাজবংশের অপর পার্ট বা বংশধর জলপাইগুড়ি-বৈকুণ্ঠপুরের রাজা প্রসন্নদেব রায়কতের (Prasannadeb Raikat) নামাঙ্কিত কলেজটিতে ‘রায়কত‘ পদবী বাদ দিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের বারোদুয়ারী – মহারাজা মাঝখানে অবস্থিত ইন্দিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এই জোচ্চুরি লক্ষণীয়। পরে এসব নিয়ে আরও ফিল্ড ওয়ার্ক করে বিস্তারিত লিখবো। ১৮৮০ থেকে ১৮৮৯ পর্যন্ত ব্রিটিশ জামানায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অসমের গুয়াহাটির কটন কলেজ, বর্তমান কটন বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের কার মাইকেল কলেজ, দার্জিলিং-এর সেন্ট জোসেফ কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বৃটেন থেকে পাশ করা উচ্চশিক্ষিত কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর কোচবিহারে ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। নব্য ঔপনিবেশিক বহিরাগতরা রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে ভিক্টোরিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন করে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজে রূপান্তরিত করে। গোটা উত্তরবঙ্গে এরকম ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ আছে।
এবার বলি আমাদের তরাই অঞ্চলে অর্থাৎ শিলিগুড়ি মহকুমায় সবচেয়ে জমি দান করা হয়েছে। উত্তর-পুর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় সেনা ছাউনী বেঙডুবি-পন্তাবাড়ি, বাগডোগরা এয়ারপোর্ট, ডি.আই ফান্ডের হাট-বাজার, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী অফিস-কাছাড়ি, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ, তিস্তা প্রজেক্ট.…..প্রভৃতি হিসাব ধরলে হাজার একর জমি দান করা হয়েছে। ক্ষতিপূর জোটেনি তাদের। জুটলেও তা যৎসামান্য। বেশির ক্ষেত্রেই একটা কানা কড়ি পর্যন্ত পায়নি। বেশির ভাগ জমিদাতা আজ পথের ভিখারি। অথচ দান করা উদ্বৃত্ত জমিতে বহিরাগত ঘটিবাটি সম্বলেরা আজ ফুলে – ফেঁপে উঠেছে।
এই ধরণের শোষণের প্রতিবাদ স্থানীয় ভূমিদাতা তো প্রতিবাদ কোনোদিনই করেনি। ক্ষমতাসীন লেজুর ধরা কোচ রাজবংশী নেতারা (Koch Rajbanshi leader) বেশি মাত্রায় মদত দিয়েছিল। সেই ধারা আজও অব্যাহত।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (North Bengal University) হাজার হাজার বিঘা জমি দান করে হোম গার্ডের চাকরিটুকু জোটেনি। আজ রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে বর্তমান সরকার ১৫ বিঘা জমি কর্পোরেটের হাতে তুলে দিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্য এবং ষড়যন্ত্রকে ধিক্কার জানাই।
১৫ বিঘা জমি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের