কেদারেশ্বর শিবমন্দির – হাজো
আজ থেকে পাঁচশত বছর আগে মহারাজা নরনারায়নের আমলে কামতা-কুচবিহার (Kamta – Coochbehar) রাজ্যের পরিধি দীর্ঘায়িত ছিল। শাসক হিসেবে মহারাজা নরনারায়ন (Maharaja Nara Narayan) যেমন ছিলেন প্রজাবৎসল, তেমনি নিষ্ঠাবান ধর্মপরায়ন ছিলেন। তার বদান্যতায় সংস্কার হয়েছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির এবং শৈববংশীয় মহারাজা হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় শিবমন্দির প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন। বর্তমান কামরূপ জেলার (Kamrup District) হাজো তে (Hajo, Assam) অবস্থিত কেদারেশ্বর শিবমন্দির (Kedareshwar Shiva temple) তিনি বা তার ভাইপো রঘুদেব নারায়ন (Raghudev Narayan) প্রতিষ্ঠা বা সংস্কার করেছিলেন কিনা তার সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলেও (জনশ্রুতি অনুযায়ী, আহোম রাজা রাজেশ্বর সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল) তাদের মন্দির নির্মাণ বা সংস্কারে প্রভাব বা অবদান থাকতে পারে না এটাও অস্বীকার করা যায় না। কারণ ঐ সময়ে পার্শ্ববর্তী হয়গ্রীব মন্দির, কামাখ্যা মন্দির (Kamakhya temple) সংস্কারে মহারাজা নরনারায়নের অবদান বা ভূমিকার কথা বহুল প্রচলিত। আর যেহেতু এটা শিব মন্দির, শিববংশীয় মহারাজা কোন না কোনভাবে এই মন্দির রূপায়নে ভূমিকা নিয়েছিলেন (তথ্য অনুসন্ধান বা গবেষণা হতেই পারে) তার বলাই বাহুল্য। পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত এই মন্দিরটি খুবই আকর্ষণীয়।
Writer: Kumar Mridul Narayan
আসামের হাজোতে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং মুসলমানদের জন্য বেশ কয়েকটি ধর্মীয় স্থান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি পবিত্র স্থান, হিন্দুদের জন্য হাজোর কেদারেশ্বর মন্দির (Kedareshwar Shiva temple)। মন্দিরের প্রধান দেবতা হলেন দেবাদিদেব মহাদেব শিব। মন্দিরের দেয়ালে লেখা শিলালিপি অনুসারে এটি একটি সুপরিচিত মধ্যযুগীয় শিব মন্দির।
জনশ্রুতি অনুযায়ী ১৭৫৩ সালে আহোম রাজবংশের রাজা রাজেশ্বর সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মদন চাল্লা (Madan Challa) নামক ছোট পাহাড়ের টিলায় এই মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরের স্বতন্ত্রতা এই সত্যে নিহিত যে, এটিতে বিরল স্ব-উৎপন্ন ফলিক চিহ্ন বা স্বয়ম্ভু লিঙ্গ রয়েছে, সেটিও অর্ধনারীশ্বর বা উভলিঙ্গ আকারে। লিঙ্গটি সাধারণত একটি ধাতব পাত্রে ঢেকে রাখা হয়। ঐতিহাসিকভাবে, এটি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। তাই ধর্মীয় তীর্থস্থান ছাড়াও ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্ব উৎসাহীরা প্রায়শই শিবের এই সুন্দর মন্দিরটি দেখতে যান।
এছাড়াও কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন মুসলমানদের পোয়া মক্কা মসজিদ এবং হিন্দু ও বৌদ্ধদের হয়গ্রীব মাধব মন্দির। নির্জন পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত মন্দিরটির শান্ত, সুন্দর, তপোবন পরিবেশ দৃশ্যটিও চমৎকার।
কেদারেশ্বর মন্দির এবং গুয়াহাটির মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৩২ কিমি। এক ঘণ্টা সড়কপথে গুয়াহাটি (Guwahati) শহর থেকে কেদারেশ্বর মন্দিরে পৌঁছানো খুব কঠিন নয়। গুয়াহাটি থেকে এই মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। এই এলাকার কাছেই রয়েছে গৌহাটি বিমানবন্দর এবং রেলওয়ে স্টেশন।