কুচবিহার রাজপরিবার ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
লিখেছেন কুমার মৃদুল নারায়ণ
কুচবিহার রাজপরিবারের (Coochbehar Royal Family) সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (Kabiguru Rabindranath Tagore) ও শান্তিনিকেতন এর সঙ্গে দীর্ঘকালব্যাপী এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুরের (Maharaja Nripendra Narayan Bhupbahadur) সঙ্গে কেশবচন্দ্র সেনের (Keshab Chandra Sen) কণ্যা সুনীতি দেবীর (Sunity Devi) বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে। জীবদ্দশায় কবিগুরু রাজশহর কুচবিহারে (Coochbehar) পদার্পন না করলেও তার সঙ্গে রাজপরিবারের (Coochbehar Royal Family) আত্মিক যোগাযোগ চিরকাল ছিল। মহারাণী সুনীতি দেবীর (Maharani Sunity Devi) সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ও রাজকন্যা ইলা (Ila Devi) , গায়েত্রী (Gayatri Devi) ও মেনকা দেবীর (Menaka Devi) শান্তিনিকেতন (Shantiniketan) এ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য রাজপরিবার এর সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন মাত্রা যোগ করে। কুচবিহার রাজপরিবার ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Coochbehar Royal Family and Rabindranath Tagore) এর আত্মিক সম্পর্ক বিভিন্ন যোগসূত্রের মাধ্যমে খুঁজে পাই।
নৃপেন্দ্র নারায়ণ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুরের এর সঙ্গেও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কবিগুরু মহারাজার কোলকাতার প্রাসাদ উডল্যান্ডস্ (Woodland Palace of Kolkata) ও দার্জিলিং (Darjeeling) এর বাড়িতে অনেকবার মহারাজার আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। মহারানী সুনীতি দেবী কলকাতার বাড়িতে থাকলে কবিগুরু মাঝেমধ্যেই যেতেন এবং সাক্ষাতে সম্ভব না হলে তাদের মধ্যে পত্রালাপ হতো। পত্রালাপ এর মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবন, রাজপরিবার, ছেলেমেয়েদের খোঁজখবর এবং বিভিন্ন বিষয় আদানপ্রদান হতো। বহুমূল্যবান চিঠি (precious letters) গুলি ছিল ঐতিহাসিক সম্পদ (Antique) । এই মূল্যবান চিঠিগুলি কুচবিহারে আর নেই।
কুচবিহার রাজপরিবার ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / বৈবাহিক সম্পর্ক
এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সঙ্গে কুচবিহারে রাজপরিবারের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন ভূপবাহাদুরের মেয়ে সুকৃতি দেবীর (Sukriti Devi) বিয়ে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দি স্বর্ণকুমারী দেবীর (Swarnakumari Devi) পুত্র জোৎস্নানাথ ঘোষালের (Jyotsnanath Ghoshal) সঙ্গে। মহারাজকুমার ভিক্টর নিত্যেন্দ্র নারায়ণ (Victor Nityendra Narayan) স্ত্রী নিরুপমা দেবী (Nirupama Devi) সম্পাদিত পত্রিকা “পরিচারিকায়” (Paricharika Patrika) লিখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রাজকন্যা ইলা দেবীর সহিত ত্রিপুরার রাজকুমার রমেন্দ্র কিশোর দেববর্মার (Ramendra Kishore Debbarma of Tripura) শুভপরিণয় উপলক্ষে আশীর্বাদস্বরূপ চিঠিও তিনি লিখেছিলেন। মহারানী সুনীতি দেবীর মৃত্যুর পর কমলা কুটিরে (Kamala Kutir) যে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এডিসি পূর্ণানন্দ রায় ও ইন্দিরা রায়
পরিশেষে কুচবিহারের রাজপরিবারের নিকটাত্মীয় ইন্দিরা রায় (নারায়ণ) এর সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কের কথা না বললে ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণের (Maharaja Jitendra Narayan) এডিসি পূর্ণানন্দ রায়ের (ADC Purnananda Roy) সহধর্মিনী ইন্দিরা রায় (Indira Roy) রাজকুমারীদের (গায়েত্রী, ইলা, মেনকা ) অভিভাবিকা হিসেবে শান্তিনিকেতনে গিয়ে কবিগুরুর সান্নিধ্যে আসেন। তার স্নেহছায়ায় আড়াই বছরে শান্তিনিকেতনে সঙ্গীত মহলে সুনাম অর্জন করে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে কুচবিহারে ফেরেন। শান্তিনিকেতন থেকে ফিরলেও ইন্দিরা রায়ের সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ অক্ষুন্ন ছিল। রবীন্দ্রনাথের প্রেরিত পত্র তার নিদর্শন বহন করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি / Letters of Rabi Thakur
রবীন্দ্রনাথের পাঠানো ইন্দিরা রায়কে অনেকগুলি চিঠি পর্যাপ্ত সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেলেও যতটুকু আজও রক্ষিত আছে তাই অমূল্য সম্পদ। রবীন্দ্রনাথের পাঠানো অমূল্য চিঠিখানি সংরক্ষিত করে রেখেছেন স্বর্গীয় ইন্দিরা রায়ের নাতি আশিস রায়। ২৫শে বৈশাখ কবিগুরুর জন্মদিনে এই মূল্যবান চিঠিখানি তিনি লকার থেকে বের করে কৌতুহল আগ্রহীদের চাহিদা মেটান।