রাজবংশী ব্যবহৃত টোগা পড়িতে আমি ঘৃণা বোধ করি - উকিল মৈত্র

VSarkar
0
panchanan toga

I hate to use a toga used by a “Rajbanshi”

Advocate Maitra (Rangpur Court, 1st decade of 2oth Century)

“রাজবংশী ব্যবহৃত টোগা (Rajbanshi used toga) পড়িতে আমি ঘৃণা বোধ করি” – উকিল মৈত্র (রংপুর কোর্ট, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের কোনো একদিন। রায়সাহেব ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা ওনার টোগা ব্যবহার করেছিলেন তাড়াহুড়ো বশত, ফেরত দিতে গিয়ে এই কথা শুনতে হয়েছিল উকিল মৈত্রর নিকট)। উকিল মৈত্র ছিলেন বাঙালি – ভাষা, কৃষ্টি সংস্কারে।

সেই সময় রাজবংশীরা কি ছিল? ভাষা কৃষ্টি সংস্কারে রংপুরের প্রগতিশীল রাজবংশীরা কি মনে করতেন নিজেদের ? বাঙালি, রাজবংশী না কামতাপুরী? কেউ বলবে বাঙালি, কেউ বলবে রাজবংশীই, আর কেউ হয়ত কামতাপুরী। কেন তিনরকম উত্তর হবে। উত্তর তো একটাই হওয়ার কথা।

রাজবংশী ব্যবহৃত টোগা পড়িতে আমি ঘৃণা বোধ 

কথা হল 1872, 1881 সালের জনগননায় কোচ বাদ দিয়ে ব্রাত্য ক্ষত্রিয় তারও অনেক পরে রাজবংশী। রাজবংশী নাম ও ক্ষত্রিয় এর পৈতা নিলে কি মৈত্র বাবু ও তার সমাজ I love Rajbanshi, i shall adopt your language and culture বলেছে, বলতে পেরেছে?

আমরা কোচ নই, কোচ নিকৃষ্ট আমরা রাজবংশী উৎকৃষ্ট – মৈত্র বাবুর থেকে কম কিসে? পরোক্ষ ভাবে আমরা মৈত্র বাবুকেই সমর্থন করেছি, মৈত্র বাবুর মতই হওয়ার আশা রাখছি শুধু মনের দিক থেকে নয় ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতির দিক থেকেও।

প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস কি বলে?

প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস (দেখে নিন)আমাদেরকে কোচ বলেছে (আমরা কোচ মানে ধরে নিয়েছি isolated একটা জনগোষ্ঠী যার মধ্যে আদিমতা এখনও রয়েছে যেটা হয়ত প্রাতিষ্ঠানিক সমাজ সংস্কৃতির সাথে তুলনা করলে সেকেলে মনে হয় সেই সময়ে আমাদের কিছু সংখ্যক জোতদার প্রগতিশীল পরিবারের কাছে) , আদি কাল থেকে চলে আসা একটা সমাজে ভালো- মন্দ, ধনী- গরীব, এক পরিবার থেকে অন্য পরিবার খাদ্যাভাসের প্রকারভেদ স্বাভাবিক নিয়মেই তৈরী হয়। এখনো আছে, কারও বাড়িতে শামুকের তরকারি খায় কেউ শামুক খায় না। আগের জেনারেশন খাসির মাংস খেত ব্রয়লার দেখলে নাক চেপে ধরত। এখনকার জেনারেশনে দেখি ব্রয়লারের মাংসটাই বেশী পছন্দ করে।

ঠাকুর পন্চানন বর্মা ক্ষত্রিয়করণ করার পর রাজবংশী কে SC করণ ( Koch Rajbanshi SC/ST দেখুন বর্তমান অবস্থা ) করেছিলেন। সামাজিক দৃষ্টিতে ক্ষত্রিয় আর SC একসাথে contradictory. এটা কোনো আদর্শের মধ্যে পরে না, এটা ছিল সময়ের দাবী। বাস্তবিক ভাবে বলতে গেলে দুটোই সময়ের দাবী ছিল বলে আন্দোলন করেছিলেন। অনেকে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার আদর্শ নিয়ে শব্দবাণ নিক্ষেপ করে। আদর্শ গুলো কি কি সেইটাই এখোনো ওনাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম না। ঐ সময় ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা যদি SC র জন্য আবেদন না করে ST র জন্য আবেদন করতেন ভারত /ব্রিটিশ  সরকার সেটাও গ্রহন করত নিঃসন্দেহে। কিন্তু কোচ আর রাজবংশী ভাগ করে কি লাভ হয়েছিল? ভাগাভাগি করতে গেলে নিজের পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যেই ভাগ করা যায় নতুন নাম দিয়ে, পদবী পরিবর্তন করে। ওর এটা নাই আমার এটা আছে, ও অন্য সংস্কৃতির মেয়েকে বিয়ে করে পরিবারের ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতি পরিবর্তন করেছে, আমার পরিবার এখনো নিখাদ কামতাপুরী ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতি ধরে রেখেছি ইত্যাদি।

coochbehar palace rajbanshi

Cooch Behar Palace (Koch Dynasty), Pic: collected from FB

পদবী পরিবর্তন

রায়সাহেব পন্চানন সরকার থেকে পন্চানন বর্মা, উপেন্দ্রনাথ দফাদার থেকে উপেন্দ্রনাথ বর্মন। এরকম অনেক পদবী পরিবর্তন হয়েছে। এরকম পদবী পরিবর্তন করে আদৌ কি লাভ হয় আমি জানিনা তবে নিজের স্বকীয়তা কে কিছুটা হলেও লুকানোর প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে। কার কাছে লুকানো? উচ্চবর্ণ বাঙালির কাছে? যাইহোক এইসব আমার উপলব্ধির কথা লিখলাম।

ভালো লাগলে লেখাটি শেয়ার করবেন। কোচ-রাজবংশী জাতি, কামতাপুর মাটি ও ভাষা (স্থানবাচক) । তিনটিই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো না লাগলে I hate Koch-Rajbanshi বলতেও পারেন। 

আমাকে কেউ যদি বলে তোমাদের ভাষা কৃষ্টি কালচার কেমন জানি (পাল্লা ভারি করে খিল্লি করে), তোমরা শিদল খাও ছিঃ, এই গন্ধে মানুষ থাকতে পারে ইত্যাদি । এটা আমার দোষ নয় বা আমার সমাজের দোষ নয় বা ওর কথাতে আমার সমাজ নিকৃষ্ট হয়ে গেল তাও নয়। এটা ওর বা ওদের সমস্যা, ওদের অভিজ্ঞতার অভাব, হয়ত নিজেকে উৎকৃষ্ট দেখানোর প্রয়াস – অর্থাৎ সার্বিকভাবে ওর বা ওদের সমস্যা এটা বুঝতে হবে।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)