সমাজনীতি অর্থনীতি রাজনীতি, কোচ রাজবংশী কামতাপুরী দের অবস্থান
Writer: Vivekananda Sarkar
জলপাইগুড়ি বিজেপি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী , জলপাইগুড়ি ক্রিড়া ব্যক্তিবর্গ তথা মিহির ব্যানার্জি, কুমার দত্ত, পুরোজিৎ বক্সিগুপ্ত, রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় (তৃণমূল) , কেন্দ্রীয় বন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (বিজেপি) , প্রমুখের বক্তব্য মোটামুটি একই সরলরেখায় অবস্থান করেছে। অর্থাৎ রেন্জার সন্জয় দত্ত যা করেছেন ঠিকই করেছেন। আইনকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা স্বপ্না বর্মন কে হেনস্থা
অন্যদিকে কোচ রাজবংশী সমাজের সমস্ত স্তরের গন্যমান্য ব্যক্তি তথা রাজনীতি ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য একই (রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ অবশ্য নিরবতাও পালন করেছিল) যা হল স্বপ্নার বাড়িতে যে ভাবে অফিসার সন্জয় দত্ত (যে রাজবংশী নয়) হানা দিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ করে সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, বিট অফিসারও (অরাজবংশী) অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের মুখ উজ্জ্বল করা স্বপ্না বর্মনের উপরে আঙ্গুল তুলে কথা বলেছে, কোনো এক সৈনিক লাঠি উচিয়ে কথা বলেছে। উত্তরের জন সমাজের একটা বিশেষ অংশ স্বপ্নাকে অপরাধী বানিয়েই ছাড়বে এই প্রবনতা নিয়ে ফেসবুকে কমেন্ট করেছে, শিক্ষিত মানুষদের কেউ কেউ আবার এতটাই কুরুচিকর মন্তব্য করেছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। ঐ বিশেষ সমাজের কলেজ পড়ুয়া মেয়েরাও এমনভাবে কমেন্ট করেছে যেন স্বপ্নার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত দুষমনি ছিল।
প্রিন্ট মিডিয়াও দ্বিচারীতা করে খবর পরিবেশন করেছে, কখনো ফলাও করে প্রথম পাতায় আবার কখনো কাগজেই জায়গা পাচ্ছে না কোনো খবর। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ স্টেপ নিয়েছেন। উনি এক বক্তব্যেই উপরিউক্ত ব্যক্তিবর্গের আইন কানুনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে স্বপ্নাকে আইনের প্যাচমুক্ত করেছেন (কালিমা মুক্ত করতে পারলেন কিনা জানি না)। মুখ্যমন্ত্রী যখন আইন হাতে নিয়ে নিয়েছেন সেই বিশেষ সমাজের দলমত নির্বিশেষে মাননীয় ব্যক্তিরাও চুপ হয়ে গেলেন, আর উচ্চবাচ্য করলেন না। অফিসার সন্জয় দত্ত কে প্রোথোমে মেদিনীপুর বদলি করবে শোনা যাচ্ছিল কিন্তু পরে দেখা গেল কাছাকাছি এক জায়গায় পোস্টিং দিয়েছেন। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হচ্ছে এখানে যেন একসমাজের মানুষ উত্তরের আদি জনগোষ্ঠীর মানুষদেরকে ঠিক বরদাস্ত করতে পারছেনা, এদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক উন্নতি যেন ঐ বিশেষ সমাজের নিয়ন্ত্রণে থাকে। যতটা ওরা চাইবে ততটাই যেন উন্নত হয়, তার বেশী হলেই ছলে এবং বলে সেটাকে ছেটে দিতে হবে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ঠিক একই পুনরাবৃত্তি।
উত্তরের কোচ রাজবংশী কামতাপুরী এই বিশাল জনগোষ্ঠী সার্বিকভাবে রাজনীতির শিকার এ ধ্রুব সত্য। যদি বলা হয় যে তোমাদের রাজনীতিও করতে হবেনা ভোটও দিতে হবেনা, সামাজিক ভাবে সংঘবদ্ধ থাকো। আমার মনে হয় এইভাবেও থাকলে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের আরো ভালো উন্নতি করতে পারবে, বিপদে একে অপরের পাশাপাশি দাড়িয়ে সমাজকে আরো সংঘবদ্ধ করতে পারবে। যদিও বাস্তবে এই জিনিসটা হয় না। অনেকে রাজনীতি করেন সমাজের জন্য আর অনেকে করেন নিজের পেট চালানোর জন্য, তাদের কাছে রাজনীতিই হল রুটি রোজী। অনেক শিক্ষিত মানুষও আরো অনেক কিছু পাবার আশায় রাজনীতি করেন, সমাজের উন্নতি তাদের কাছে ব্রাত্য। এর মধ্যে অনেকে আবার সামাজিক রসদ যেমন ভাষা সংস্কৃতি ব্যবহার করে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। অনেকে সেই আসনটা পাবার জন্য সামাজিক রসদ ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আমি জানি এনাদের কেউই পলিসি মেকার নয় ঐ বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলির। এরা শুধুই শ্রমিক ।
এনারাও ঐ বৃহৎ রাজনৈতিক দল দ্বারা ব্যবহৃত হন আর যখন পুরোপুরি ব্যবহার হয়ে যায়, আর বিশেষ কিছু পাওয়ার নেই, তখন ছুড়ে ফেলে দেন আস্তাকুড়ে। তারপরেও এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষের শিক্ষালাভ হয় না। আশ্চর্য্য তখনই হই যখন শিক্ষিত মানুষেরাও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় একে অপরকে তুলনায় রেখে। ওনারা নিজের মানুষের, নিজের সমাজের, নিজের মাটির উন্নতির কথা ভাবতে গিয়ে পরক্ষনেই ভেবে বসেন যে অমুক ব্যক্তি এক বিশেষ রাজনৈতিক (ধরে নিন ক্ষমতায় আছে) দলে বিশেষ পদে আছে, সেই মান সন্মান, হয়ত বা কিছু উপরি ইনকামও রয়েছে। আমি তো ঐ দলে জায়গা করতে পারলাম না তাহলে ঐন্য আর এক বৃহৎ রাজনৈতিক দলে যোগ দিই, আমারো খুব মানসন্মান হবে ইত্যাদি। মোট কথা আমরা ঐ বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর পিছনে যাই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা ভেবে। ভাষার নাম নিয়া সমাজ বিভক্ত যার কোনো বেস নেই, বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কারিগররা তো আর এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষ নয় তারা ভাষার মর্ম কি বুঝবেন। অথচ নিজের মানুষ যারা ঐ রাজনীতিতে আছে তারা চুপ করে আছে। শুধু মাত্র নিজের স্বার্থে। উত্তরের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর এই মুহূর্তে আগে সামাজিক একতা জরুরী তারপরে নাহয় রাজনৈতিক। জাতিগত বিদ্বেষ মনোভাব, চিন্তা এগুলো কখনোই পৃথিবী ছেড়ে যাবেনা এই চিন্তা মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে সবাইকে।