মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকাল ও কামতা সাহিত্যের অংশবিশেষত চন্ডীদাস দত্ত আর দ্বীজ ধর্মেশ্বর উল্লেখযোগ্য।
মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকাল ও কামতা সাহিত্যের অংশবিশেষ। Maharaja Narendranarayan and Kamata Literature
মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালত (1855 খ্রিস্টাব্দে) রাজমাতা পিষু আইয়ের নির্দেশে কামরূপ দেশবাসী দ্বীজ ধর্মেশ্বর (1602 খ্রিস্টাব্দে) পীতাম্বরের ল্যাখা মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর অনুলিপি প্রস্তুত করেন। মহারাণী বৃন্দেশ্বরী ছিলেন এই “পিষু আঈ’ বা ছােট মহারাণী। কোচবিহার উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারত এই গ্রন্থের দুইটা সম্পূর্ণ পুথি সংরক্ষন করা আছে (পুথি নং 8 এবং 13)।
পুষ্পিকা অংশত ল্যাখা আছে –
অতি মান্য ধন্য শ্রীশ্রীনরেন্দ্রনারায়ণ।
ভূপ বাহাদুর বটে বিহার জীবন ।।
চিরজীবি হৌক মম এহি আকিঞ্চন ।
দেশ হৈতে আসি পুন করি দরশন ।।
এহি রাজমাতা পিষুু আই নামে খ্যাতা।
দয়াশীলা দীনজনে পােষণেতে রতা।।
তাহার আদেশে মার্কন্ডেয় এ পুরাণ ।
যত্নে লিখিলাম দ্বিজ ধর্মেশ্বর নাম ।।
পূর্ব্বদেশে কামরূপে নিবাস আমার ।
আশীর্ব্বাদ করিলাম জোর করি কর।।
শাক-সিন্ধু মুনিধর-বিধুপরমাণে ।
সমাপন হৈল পুথির বিরাম লিখনে ।৷
1863 খ্রিস্টাব্দে ল্যাখা হিসাবে চিহ্নিত এখান 13 ইঞ্চি চওড়া এবং দৈঘ্যে পৌনে দশ ফুট মাপের লম্বা গােটোকরা কাগজত হস্তলিখিত পুথির সন্ধান পাওয়া গেচিল যেইটার রচয়িতা হিসাবে চণ্ডীদাস দত্তের নাম পাওয়া যায়। চণ্ডীদাস (পুথিতে কোনো কোনোটে চণ্ডী দত্ত নামটি ব্যবহৃত হৈচে) রচনা করেন ‘বিহারাধিপতি শিববংস পরিচয়’। কাব্যাংশত গঠনশৈলীত আছে হেটো কবিতার ভার্স-রিপিটিং গায়নরীতি। লেখ্য ভাষার যুগত হৈলেও কবিতাখানের সুচারু এবং পরিশীলিত উপস্থাপনার ভিতরা দিয়া কবি চণ্ডীদাস এটিখোনা আখ্যান কাব্যর ঢঙত বস্তুত সেই সমায়কার কোচবিহার রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাস আরো পাশাপাশি সমকালীন জনজীবনের প্রতিচ্ছবি যেংকরি ফুটি তুলিচেন, তা’ দেখি রীতিমত অবাক করার নাখান। পুথিখান শুরু হৈচে হর ও পাব্ব্বতীর কথােপকথন দিয়া যেটি শিব কৈলাস থাকি নামি আসিচেন “নিজ অংসে সিববংষ করিতে প্রচার”। পুথিটির ভণিতা এই নাকান-
“ষুন সব্ব্বজন ২। আবেদন চণ্ডীদাষে কয়। বিহারাধিপতি সিব বংষ পরিচয়।।” মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের সমায় শিবপ্রসাদ বক্সী সহযােগে কাশীযাত্রার সমায় থাকি তাঁর বেটা শিবেন্দ্রনারায়ণের সিংহাসনারােহণ, আর কিয়ৎকাল রাজ্যভােগের পর শিবেন্দ্রনারায়ণের শিবপ্রসাদ বক্সী এবং দেওয়ান কালীচন্দ্রসহ কাশীযাত্রা, সেটি শিবপ্রসাদক রাজমন্ত্রী হিসাবে নিয়ােগ ও শিশু নরেন্দ্রনারায়ণক বেহার রাজ্যর উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁর হাতত সমর্পণ-
নরেন্দ্রনারায়ণের শিক্ষাকালত দেশের অবস্থা বর্ণনা, ভুমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, মড়ক ও মারিভয়, এবং অবশেষে শিক্ষা শ্যাষত তাঁর সিংহাসনত অভিষেক- এর বর্ণনাত আসি কবিতাখান শ্যাষ হওয়ায় প্রতীয়মান হয় যে এই অনুষ্ঠানক কেন্দ্র করিয়াই কবি চণ্ডীদাস দত্ত এমন একটা ঘটনার মাহাত্ম প্রচারের আশাত ও এই মহারাজালার আগিলা মানষিলার ইতিহাস রচনা করার প্রয়াসী হৈচিলেন। একেসমায়ে কোচবিহার রাজ্যত ইতিহাস রচনার ব্যাপারতো এখনা জোয়ার আসছিল। সেই ব্যাপারত রাজসভার বিশেষ অবদানও ছিল। ফলে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের সমায়ে পরমানন্দ তর্কালংকার মহাভারত বনপর্বের পুথির অন্তর্ভুক্ত কোচবিহারের ইতিহাস, জয়নাথ মুন্সীর রাজাপাখ্যান’, জগদ্দুর্লভ বিশ্বাসের সঙ্গীতশঙ্কর গ্রন্থে মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণের রাজ্যাভিষেক বর্ণনা, মহারাণী কামেশ্বরী দেবীর নির্দেশে রিপুঞ্জয় দাসের ‘মহারাজবংশাবলী, শিবেন্দ্রনারায়ণের মহিষী মহারাণী বৃন্দেশ্বরী দেবীর “বেহারােদন্ত“, এই সবই নিয়ত সচেষ্ট কোচবিহার রাজপরিবারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফসল। ঢণ্ডীদাস দত্তের পুথিখানত পৃষ্ঠপােষকতার কোন উল্লেখ নাই। সম্ভবত ইয়ার পাছিলাত কোন প্রত্যক্ষ পোষ্টাও ছিলেন না। ইতিহাস থাকি যেখুনা জানা যায়, দেবীদত্ত দাস নামে রাজসভাযত মহারাণী কামতেশ্বরী দেবীর একজন ওয়াক্কানবীস ছিলেন, যায় ‘সাক্ষাৎ হুকুম প্রমাণ’ লেখিতেন। চণ্ডীদাসের রচনা কোনো কোনো সমায় সমসাময়িক কোচবিহারের উল্লেখযোগ্য প্রতিচ্ছবি হিসাবে দ্যাখা যাইবার পায়। 1853 খ্রীষ্টাব্দত শিশু মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের কৃষ্ণনগরত শিক্ষা শ্যাষের সমায় রাজ্যের অবস্থা করুন হয়া ওঠে। এই সমায় রাজ্যত এক দারুণ দুর্ভিক্ষ ও জুই নাগে, যা পরে মহামারীর আকার ধারণ করে। কবি চণ্ডীদাসের বর্ণনাত সেই ছবি ফুটি উঠিচে জলজ্যান্ত ভাষাত। ফলে সমসাময়িক ইতিহাস রচনার উপকরণ হিসাবেও এইখান উল্লেখযােগ্য।
খানেক বর্ণনা তুলি ধরা হৈল্ -
বহু প্রজা বংশ ২। হএ ধংশ গােবৎস প্রভৃতী।
দুর্ভিক্ষ হইল রাজ্য সষ্যহীন খিতি ।
মড়কতীশয় ২। মারিভয় দুর্ভিক্ষ উদয় ।
তাজ্যব এ রাজ্যে মানুশে মানুষ খায়।
বড় অগ্নিভয় ২। অতিসয় হয়ত হটাত।
নিসাকালে কাক ধনি বয় উল্কাপাত ।
দিবা শীবা ডাকে ২। চতুদ্দিকে স্বীয় রাজ্যময় ।
রাজপুর পরি করে ষুকনি আশ্রয় ।
এসব মলিন ২। অকুসল করিএ দর্শন।
মলিন মদন মােহন করেন বদন।
কিমন্ভূত দৃষ্টি ২।……
হেরি এই সব ২। সর্বেসব সব পরিহরি।
প্রবীন মচ্ছুদ্দী সব জান সর্গপুরী।
হয় অগ্নিনিত্য ২। নিত্য নিত্য রাজ অন্তপুরে।
বারম্বার অগ্নিদাহ রাজপুর পােড়ে।
তাতে সর্ন্নখানা ২। তােশাখানা ভাণ্ডার প্রভৃতি ।
ঠাকুরবাড়ী তারাবাড়ী প্রজার বসতি।
পােড়ে বহুতর। ২। অস্থাবর সহর বাজার।
কেবল বাঁচিল রাজমুস্ত্রী বাশা ঘর।
তার পুণ্যবলে ২।….
1854 খ্রীষ্টাব্দত বৃটিশ এজেন্ট কর্ণেল জেন্কিন্সের কাছে মহারাণীলার ল্যাখা এখান চিঠি থাকি জানা যায় “in 1260 B. S., A. D. 1854-55, Court-house was burnt” হেটো কবিতার নাকান হৈলেও সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রত চণ্ডীদাস দত্তের এই পুথিখান এখান অমূল্য সম্পদ। শিক্ষাগ্রহন শ্যাষ করি মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের রাজ্যভার গ্রহণের বর্ণনা দিয়া পুথিখান সমাপ্ত হৈচিল।
# Maharaja Narendranarayan, Chandidas Dutta, Dwij Dharmeshwar, Beharodanta, Maharani Brindeshwari.
Reference: kochbeharer rajdarabarer Sahittocharcha/SK Roy