দেবী চৌধুরানী কালি মন্দির, গোশালা মোড়, জলপাইগুড়ি।
শতাব্দী প্রাচীন জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানী কালি মন্দিরের (Devi Chaudhurani Kali Mandir – Goshala More, Jalpaiguri) ঐতিহাসিক পেক্ষাপটে গুরুত্ব অপরিসীম। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দেবী চৌধুরানী। বাংলাদেশের রংপুরের মন্থনী রাজ এস্টেটের সর্বময় কর্ত্রী জয় দুর্গা দেবী চৌধুরানী (Devi Chaudhurani) নামে এক তেজস্বিনী মহিলা ছিলেন। তাঁকেই কল্পনায় দেবী চৌধুরানী হিসাবে রূপ দিয়েছিলেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Bankim Chandra Chattopadhaya)। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস আনন্দমঠ এ (Anandamath) ভবানী পাঠক (Bhabani Pathak) এবং দেবী চৌধুরানীর যে উল্লেখ রয়েছে, স্থানীয় মানুষরা মনে করেন, এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠক। দেবী চৌধুরানী সেই সময় ব্রিটিশ এবং জমিদারদের কাছ থেকে ধন সম্পদ লুট করে এই মন্দিরের গর্ভগৃহে রাখতেন লুঠ করে আনা সামগ্রীগুলি। এরকম আরো একটি জলপাইগুড়ির শিকারপুর চা বাগানে দেবী চৌধুরানী কালী মন্দির আছে।সেখানেও লুটপাট করার সামগ্রী গুলি রাখা হতো। পরে সেই সামগ্রী গুলো গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন দেবী চৌধুরানী।
এই মন্দিরে মূলত মা কালীর (Maa Kali) উপাসনা করা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে Snake Tree এর মত বিশাল বটগাছ এবং সেখানেই রয়েছে দেবাদিদেব শিবের মন্দির। তন্ত্রের গুরু শিব এবং কালীর যুগলবন্দী, আকর্ষণীয় বটগাছ ও তার সর্প আকৃতির শিকর এই মন্দির কৌতুহল বাড়িয়ে দেয়।
শিলিগুড়িগামী জাতীয় সড়কের ধারে অবস্থিত প্রাচীন এই মন্দির ঘিরে নানা ইতিহাস আর জনশ্রুতি।কালী পূজার পাশাপাশি এখানে শিবের আরাধনা হয়।
একসময় নাকি নরবলি হত জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানির মন্দিরে। শোনা যায়, ১৮৯০ সালে নরবলির অভিয়োগে প্রাণদণ্ড হয়েছিল মন্দিরের কাপালিক নয়নের। তারপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি। পাঁঠাবলির রীতি অবশ্য এখনও আছে। কালীপুজোর দিন রাতভর পুজো চলে দেবী চৌধুরানির মন্দিরে। স্থানীয় মতে, দেবীকে তিস্তার মহাশোল মাছ ও বোয়াল মাছ দেওয়া হয়। রাতভর চলে পুজো। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে ভীড় জমান মন্দিরে।
এই অঞ্চলের প্রাচীন রীতিকে যেমন আমরা অবজ্ঞা করতে পারিনা, ঠিক তেমনি শিব ও দেবী কালীকে নিয়ে কটুক্তি ও বক্রোক্তিকেও আমরা গ্রহণ করতে পারিনা। এখানকার প্রধান দেবতা শিব, কালী আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ের রন্ধে রন্ধে আছে। Freedom of speech and freedom of expression এর দোহাই দিয়ে সংস্কৃতির ব্যাখ্যা করে যা খুশি বলা এবং করা অনুচিত।আবার এই দেব দেবীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা ও Cartoon এর রূপ দিয়ে ব্যবসা করা গর্হিত অপরাধ।