রাজ্যে তৃণমূল জিতলেও উত্তরবঙ্গে তৃণমূল যে সেই অর্থে ভালো ফল করেনি সেটা সবারই জানা। সেই অর্থে ভাল ফল না বলে বরং সোজা সাপটা বলা উচিত খারাপ ফল করেছে। গত লোকসভা ভোট থেকেই তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরতে শুরু করেছিল যা লোকসভা ভোটের পরেই বোঝা গেছিল। কিন্ত বিধানসভা ভোটে সাধারণ মানুষ দোনোমনার মধ্যে থাকলেও ভোটের রেজাল্টের পরই তা পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। মালদা থেকে শুরু করে আলিপুরদুয়ার মোট ৫৪ টা বিধানসভার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র সিট পেয়েছে।
কে মন্ত্রীত্ব পাবে আর কে পাবে না এটা সবসময়ই প্রশ্ন বোধক চিন্হ হয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। তার উপর আপনি যদি উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা পরিচালিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হন তাহলে আপনার অনিশ্চয়তার মাত্রা আরো বেশী। এটা শুধু তৃণমূল বলে নয় অতীতে যখন কংগ্রেস বা বামফ্রন্ট ছিল তখনও ছিল আর ভবিষ্যতে যদি বিজেপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসেও সেটার কোনো পরিবর্তন হবে না হয়ত।
উত্তরবঙ্গের রাজনীতির ক্ষেত্রে কোচরাজবংশী ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর সেটা সবাই জানে। জিতলেও কোচরাজবংশী (Kochrajbanshi) আর হারলেও কোচরাজবংশী। তবে মন্ত্রীত্ব বা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের ক্ষেত্রে (যেকোনো দল যখন জেতে) অবশ্য এই ফ্যাক্টর টাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কেন দেওয়া হয় না এই বিষয়ে কে মাথা তুলে কথা বলবে? জনসাধারণ বা সাধারন ভোটার! হারলে তো কোনো কথাই নেই।
এবারের ভোটে কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি আর দার্জিলিং এই চারটা জেলার কথা যদি ধরি তাহলে তৃণমূল যে কয়েকটি সিট জিতেছে সবকটিতে রাজবংশী প্রতিনিধি আর একটিতে আদিবাসী প্রতিনিধি। কোনো সিটেই অরাজবংশী (তথাকথিত বাংলাভাষী বললে আরো ভালো হয়) প্রার্থী জয়ী হয়নি। হারা সত্ত্বেও আপনি যখন গুরুত্বপূর্ণ পদে কে বসবে সেটা নিয়ে ভাববেন তখন দেখবেন এনাদেরই কেউ না কেউ বসবে। আর রাজবংশী (Rajbanshi) জয়ী প্রতিনিধির কাজ ছিল শুধু ভোটের লড়াই এ যেভাবেই হোক জয় তুলে আনা।
২০১৬ সালে তৃণমূল (TMC) জেতার পরেও একই ব্যাপার ছিল। কলকাতা পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারে (West Bengal Government) তখন একেকজনের কাঁধে তিনটা চারটা মন্ত্রীত্ব ছিল আর যারা একাধিক মন্ত্রীত্ব সামলেছিলেন তারা সবাই কলকাতাবাসী, পশ্চিমবঙ্গের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক বললেও হয়ত ভুল বলা হবেনা। আর একটা ব্যাপার অবশ্যই মাথায় রাখবেন যারা এতগুলো মন্ত্রীত্ব সামলেছিলেন তাদের অনেকেই কোনো না কোনো ঘোটালাতে যুক্ত ছিল। কয়েকদিন আগেই তো দেখলেন দিদির অনুপ্রেরণায় তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে মধ্যরাতেও আদালত চলে (রাজনৈতিক টানাপোড়েন বাদ দিয়েই বলছি)।
এবার দার্জিলিং থেকে আলিপুরদুয়ার যারা জিতলেন তারা হল পরেশ অধিকারী, খগেশ্বর রায়, ডঃ প্রদীপ কুমার বর্মা আর জগদীশ রায় বসুনিয়া। হেরেছেন তো অনেকেই তবুও তাদের মধ্যে বিশিষ্ট যারা হেরেছেন তারা হলেন প্রাক্তন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্র নাথ ঘোষ আর আলিপুরদুয়ার এর বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। বিজেপির কথা বলছিনা এজন্য যে তারা ক্ষমতায় আসেনি, অনেকে হয়তো বলবে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে সব ঠিক হবে অর্থাৎ আপনার সমস্ত প্রশ্ন নিমেষে সুন্দর গ্রহনযোগ্য উত্তরে পরিনত হবে। যাইহোক সেই প্রসঙ্গে আর যাচ্ছি না। সবই অলীক কল্পনা মাত্র। কারন আপন হাসবেন না কাঁদবেন, আপনার ভাব-আবেগ সবই ঠিক করে কলকাতা প্রশাসন। আপনি বংশানুক্রমে এটা দেখেই বড় হয়েছেন, কাজেই অন্য কিছু আপনি ভাবতেই পারেন না। রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে না পেরে উত্তরবঙ্গের কিছু বিজেপি ঘেষা গোষ্ঠী উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার জন্য ফেসবুকে ঝর তুলছিল। রাজ্যে ক্ষমতায় আসলে আদৌ কি এই ঝর উঠত? বা নির্বাচনের আগে এই ঝর তুললনা কেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অনেকেই তো হেলিকপ্টারে করে উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ করে গেছেন।
আজকের উত্তরবঙ্গ পত্রিকার খবর অনুযায়ী যা বোঝা গেল যে উত্তরের যেসব মন্ত্রীত্ব ব্যক্তি হেরেছেন তারা মন্ত্রী হতে না পারলেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে আসীন হওয়ার অন্যতম দাবিদার আর যারা জিতেছেন বিশেষ করে কোচরাজবংশী প্রতিনিধি তাদের মন্ত্রীত্ব বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রশাসনিক পদ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলেও চুলচেরা তথা চুলছেড়া বিশ্লেষণ হবে এবং সেখানে ভালো স্কোর করতে হবে , যেমনটা দেখে অভ্যস্ত আরকি, /কে স্কোর দেবে?। তৃণমূলের রাজবংশী প্রতিনিধি যারা হেরেছেন তাদের তো কোনো কথাই নেই। তবে মেখলিগন্জের বিধায়ক পরেশ অধিকারী স্কুল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পদ পেয়েছেন। মালবাজারের বিধায়ক বুলু চিক বরাইক হয়েছেন অনগ্রসর কল্যান দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী।
Snapshot Uttarbanga Smbad 31.05.2021 (See details)
এবার উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর আর মালদা কথা যদি বলি তাহলে তুলনামূলক ভাবে ভালো ফল করেছে তৃণমূল এই তিনটি জেলায়। অবশ্যই কারন আছে। এই জেলাগুলি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত, এতেও দেখা যাবে আধিপত্য তাদেরই যারা হয়ত ভোটে হেরে বসে আছে অন্তত প্রশাসনিক পদগুলিতে। ভোটে জিতে বালুরঘাটের বিধায়ক বিপ্লব মিত্র হলেন একমাত্র কৃষি বিপনন মন্ত্রী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী দিদি নিজে হয়েছেন আর তার আন্ডারে রেখেছেন মালদা থেকে বিধায়ক ম্যাডাম সাবিনা ইয়াসমিন কে ।
জানি না কি লক্ষ্যে রাজনীতি করছে উত্তরের সার্বিক মানুষ তথা জনপ্রতিনিধি!
©VSarkar
Rajbanshi Minister, Kochrajbanshi Minister, Northbengal Development Board,