কোচ রাজবংশী মানুষ কাজের খোঁজে বাইরে? Kochrajbanshi migrating

VSarkar
0
Kochrajbanshi migrating

কোচ রাজবংশী মানুষকে কেন কাজের খোঁজে বাইরে যেতে হচ্ছে? Why Kochrajbanshi migrating

কোচবিহার তথা উত্তববঙ্গের জেলাগুলি থেকে কোচ রাজবংশী মানুষের বাইরের রাজ্যে বা দক্ষিণের জেলায় কাজের জন্য যাওয়ার যে প্রবণতা সেটার কিছু কেস স্টাডি তুলে ধরলাম। এখানেে গবেষক (Dr. Kumar chiman Sinha, International Institute of Population Sciences, Mumbai) সরাসরি এনাদের সঙ্গেে কথা বলে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কোচবিহারের বলরামপুর, পানিশালা অন্চলের কেস স্টাডি। কোচ রাজবংশী কাজের খোঁজে বাইরের রাজ্যেে কেন গেছে বা যাচ্ছে তারই কেস স্টাডি। 

কোচ রাজবংশী পরিযায়ী হওয়ার অর্থনৈতিক কারন

1। আমার ভাই ক্লাস xi এ উঠে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে মুম্বই এ কাজের জন্য যায়। তার খুব মোবাইল ফোন আর বাইকের সখ ছিল। মোটর সাইকেলের প্রতি তার এত সখ ছিল যে সে তার বন্ধুর মোটর সাইকেল নিয়ে চালানো শিখত। কিন্তু আমরা গরীব এবং মোটর সাইকেল কেনার মত সামর্থ্য ছিলনা আমাদের। তার সেই সখ পুরণ করার জন্য মুম্বই এ চলে গিয়েছিল কাজের জন্য। সে এখনো ওখানে একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করছে। সে নিয়মিত ভাবে সামান্য অর্থ বাড়িতে পাঠায়। তার উপার্জনের বেশীরভাগটাই তার কাছে রাখে এবং যখনই সে বাড়ি আসে অনেক উপহার নিয়ে আসে। 

2। অনেকেরই চাষ করার মত নিজস্ব জমি নেই। তারা দিন মজুরি হিসেবে কাজ করে সংসার চালানোর জন্য। যদিও প্রতিদিন কাজ জোটেনা। রেশন থেকে যা তারা সাহায্য পায় তা হল 1 কেজি চাল, 1 কেজি গম, আর কেরোসিন তেল। তারা সেই চাল একদম পছন্দ করেনা কারন সেই চালের কোয়ালিটি খুবই খারাপ এবং গন্ধ করে। গ্রামের পন্চায়েত মাঝে মাঝে  কিছু কাজ দিলেও তা দিয়ে তাদের চার জনের সংসার সর্বদা চলেনা। সেজন্য সে বাইরে যেতে চায় রেগুলার কাজের জন্য। 

3। অনেকে ভাবেন যে গরীবতা দূর করতে গেলে বাইরে যেতেই হবে আর এটাই একমাত্র পথ। তারা এটাও মনে করেন যে বাইরে থাকলে একটু রিস্ক থাকে। অনেকে বাইরে থেকেছেন কিন্তু সেভাবে সাফল্য লাভ করতে পারেনি। কেউ কেউ এটা মনে করে যে যদি তারা সুযোগ পায় বাইরে গিয়ে নিজের ভাগ্যকে যাচাই করতে চায়। 
4। যারা বাইরে গিয়ে টাকা রোজগার করে তাদের হাতে খরচা করার জন্য বেশী টাকা থাকে। 

5। বেশীরভাগ মানুষ যারা বাইরে গেছে তারা হয় আত্মীয় অথবা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে গেছে। তারা বিশ্বাস করে যে বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজন ছাড়া বাইরে যাওয়া উচিত নয়। 

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে কোচবিহারে সেরকম কোনো কাজের সুযোগই নেই যা করে গরীব মানুষের সংসার সচ্ছল ভাবে চলতে পারে। উপার্জন করার সেই সুযোগই তৈরী করা হয়নি যা করে মানুষের অন্তত দুবেলা ঠিক ঠাক খাবার জোটে, শখ করে মোবাইল বা বাইক কেনা তো পরের ব্যাপার। কোচবিহারে একসময় প্রত্যেকের কাছে জমি জমা ছিল যা চাষ করে তাদের সংসার সচ্ছল ভাবে চলত। আমরা যদি কোচবিহারের আয়তন তথা আবাদি জমির আয়তন কে 1950 সালের জনসংখ্যা কে ভাগ করি তাহলে মোটামুটি আন্দাজ করতে পারি প্রত্যেক পরিবারে কত পরিমান জমি ছিল। কিন্ত কোথায় গেল সেই জমি? জমি গেছে বহিরাগত মানুষের কাছে কিছুটা আইনি ভাবে আর বেশীরভাগই বেআইনি ভাবে, রাজনীতির মাতব্বরদের সহায়তায়। আমার ব্যক্তিগত ভাবে চেনাজানা এরকম অনেক পরিবার আছে যাদের একসময় বিঘা 50 এর উপরে জমি ছিল, কিন্ত আজকে তাদের পরিবারের অনেকেই বাইরের রাজ্যে কাজ করছে।

কোচ রাজবংশী বাইরে যাওয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক কারন 

এখানে দেখা যাচ্ছে সামাজিক ফ্যাক্টর এর সাথে সাথে রাজনীতি একটা বড় ফ্যাক্টর যার জন্যও শুধুমাত্র কোচ রাজবংশী মানুষকেই সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। এখন কথা হল রাজনীতিতে তো সবাই অংশ গ্রহণ করে, সবাই ভোট দিয়ে জননেতা নির্বাচিত করে। কোচবিহারের রাজনীতি যদি দেখা যায় এখানে বেশীরভাগ সিট তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আর তাতে সিংহভাগই কোচ রাজবংশী জাতিরই কেউ না কেউ জেতে বা হারে বড় কোনো ব্যানারে। শাসক বা বিরোধী দু পক্ষেই কোচ রাজবংশী ক্যান্ডিডেট। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী 70 বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মানুষের সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন তো দূরের কথা উল্টে অবনতি হয়েছে যার পরিণতি কেরালা বা রাজস্থান গমন। পরিস্কার ভাবে বলতে গেলে কোচ রাজবংশী মানুষ নিজেরাই নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে রাজনীতির আঙ্গিনায় যার প্রভাব সামাজিক সম্বন্ধেও পড়ছে। রাজবংশী /কামতাপুরী ভাষাত যাক কয় লড়াই বোলে হাড়িবাড়ি পর্যন্ত সোন্দাইচে। মানুষের করুণ পরিণতি হওয়ার এটা অন্যতম কারণ। যারা এতদিন রাজনীতিতে জিতে এসেছে তাদের কর্মদক্ষতা, বিচক্ষণতার উপর অবশ্যই প্রশ্ন ওঠে। তবে এটা ঠিক তারা কেউই লড়াই করে জননেতা হয়নি, তাদেরকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে তাদের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে আর কলকাঠি সবই উপর থেকে নাড়া হয়েছে। “তোমরা জিতিচেন এলা তোমরা ঝিত করি নন, যা করার হামরায় করমো।” এই রকম ব্যাপার স্যাপার আর কি। 

আত্মীয় স্বজন বা বন্ধুবান্ধব কে দেখে বাইরে যাওয়ার প্রবণতা যথেষ্ট কাজ করেছে। নদিয়ার ফুলিয়া, শান্তিপুর হল অনেক কোচ রাজবংশী যুব সম্প্রদায়ের পীঠস্থান। এই প্রবণতা কে তরান্বিত করার জন্য তুফানগঞ্জ থেকে রানাঘাট সরাসরি বাস চালু করা হয়েছিল। সবাই ফুলিয়া যেত তাঁতের কাজ করার জন্য। অথচ রাজ আমলের কোচবিহার রাজ্যই ছিল তাঁত শিল্পের পীঠস্থান, মেখলা থেকে মেখলিগন্জ নাম সবাই জানে, মুগা সিল্ক তৈরী হত এখানে। এখানেও কোচ রাজবংশী নেতাদের সুচিন্তার অভাব ছিল, যাতে ফুলিয়া যেতে সুবিধা হয় তার জন্য সরাসরি বাস চালু করেছিল অথচ নিজের জেলায় যাতে ছোট বা মাঝারি তাঁত শিল্প করা যায় সে চিন্তা আসেনি। আজকের দিনও তারা কিছুই করছেনা। এখন কোচবিহারের বিভিন্ন গ্রামে অনেকেই তাঁতের কাপড়, মেখলা, দোকমা বানায় কিন্তু বিপননের জন্য তাদেরকে সঠিক দিশা দেখানোর জন্য কোনো জননেতাই এগিয়ে আসছে না। এক্ষেত্রেও অনেক চুনোপুটি নেতা আবার মিডল ম্যান বা ফরেদের সঙ্গে আঁতাত করে তাদেরকে সাপোর্ট করছে যাতে ওখান থেকে ভাগ পাওয়া যায়। যারা বাইরে গিয়ে উপার্জন করছে তাদের অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে বাইরের লোকের সঙ্গে মিশে বা বাইরের পরিবেশ দেখে। আশা করা যায় তারা নিজের জায়গায় ফিরে এসে বিকল্প উপার্জনের পথ খুলবে, কৃষির সাথে ব্যবসাকেও প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। অনেকে অবশ্য নিজ গ্রামে ফিরে এসে নিত্য নতুন ব্যবসা শুরু করে উপার্জন করছে এরকমও উদাহরণ আছে।

কোচ রাজবংশীর করণীয়

কোচ রাজবংশীর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে মেরুদন্ড সোজা করে চলতে গেলে সবার আগে শিক্ষিত হতে হবে তারপরে কারিগরি দক্ষ, কর্মঠ, ব্যবসায়িক মনোভাব, অধিকার সচেতন হতে হবে। রাজনীতি জীবিদের দরকারের বেশী প্রাধান্য না দিয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক (ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে) ভাবে সংঘবদ্ধ হতে হবে কারণ নিজেদের কোনো নেতাই নিজের মানুষের জন্য  70 বছর ধরে কিছু করতে পারেনি সার্বিক ভাবে, সুতরাং এটাই আশা করা যায় রাজনীতির প্রচলিত ধারায় (যেখানে এক কোচ রাজবংশী নেতা আর এক কোচ রাজবংশী নেতার সঙ্গে ভোটে লড়াই করছে আর লাভের গুড় খাচ্ছে কলিকাতা ও অন্য নেতা মানুষ) কোচ রাজবংশীর ক্রম অবনতি ছাড়া আর কিছু হওয়ার অপেক্ষা রাখেনা। আমি নিজেও একজন পরিযায়ী শ্রমিক, সুতরাং একজন পরিযায়ীই আর একজন পরিযায়ীর কষ্ট বুঝতে পারবে স্বাভাবিক।

# Why Kochrajbanshi people are being migrated for employment?

Courtesy: Impact of Migration on Koch Rajbanshi Community of Koch bihar


©️VSarkar

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)