এই বইখানি গ্রন্থকার শ্রীভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ কে উৎসর্গ করেছেন –
বিদ্যোৎসাহী কোচবিহারাধিপ শ্রীশ্রীযুক্ত নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভুপ বাহাদুর
মহােদয় সমীপেষু।
মহারাজ! অদ্যাপি কোচবিহারের কোনও এক খানি ইতি বৃত্ত বঙ্গ ভাষায় প্রকাশিত না হওয়াতে, এতদ্দেশীয়দিগের একটি বিশেষ অভাব আছে বলিতে হইবে। আমি এই অভাব দূরীকরণ মানসে, প্রচুর যত্ন ও পরিশ্রম করিয়া, এই ক্ষুদ্র গ্রন্থখানি প্রস্তুত করিয়াছি। যদিও অকিঞ্চিৎকরত্ব নিবন্ধন, ইহা ভবদীয় গৌরিবান্বিত নামের সংশ্ৰব লাভে নিতান্তই অযােগ্য, তথাপি কৃতজ্ঞ হৃদয়ের সামান্য উপহারও সজ্জনগণ আদরে গ্রহণ করিয়া থাকেন এবং স্পর্শ মণি সংযােগে নিতান্ত অনুপাদেয় বস্তও সুবর্ণত্ব প্রাপ্ত হইয়া সর্ব্বসাধারণের নিকট আদৃত হইয়া থাকে ; এই বিশ্বাস ও সাহসের উপর নির্ভর করিয়াই, আপনার চিরস্মরণীয় নামে উৎসর্গ করিলাম।
বিনয়াবনত শ্রীভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোচবিহারের ইতিহাস ভাগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
Read / Download Book
বইখানি প্রকাশিত করার জন্য যাঁদেরকে লেখক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তা নিয়ে কিন্চিৎ বাক্যব্যয়।
বিজ্ঞাপন
প্রায় তিন বৎসর গত হইল আমি “কোচবিহারের বিবরণ” নামক এক খানা ক্ষুদ্র পুস্তিকা এতদ্দেশীয় পাঠশালা সমূহের ছাত্রবৃন্দের শিক্ষা সৌকর্য্যার্থে প্রণয়ন করি। তদ্দর্শনে এ রাজ্যের দেওয়ান, শ্রীযুক্ত রায় কালিকাদাস দত্ত বাহাদুর মহেদয়, আমাকে কোচবিহারের এক খানা সুশৃঙ্খল ইতিহাস লিখিতে অনুরােধ করেন এবং আমিও তদনুসারে কার্য্য ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হই। কিন্তু কিছু কাল পরে এরূপ অসুস্থ হইয়া পড়ি যে, প্রায় এক বৎসর কাল আর ঐ কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে পারি না।পরে পুনরায় প্রবৃত্ত হইয়া এখন তাহা মুদ্রিত করিতে সক্ষম হইলাম।ভারতবর্ষের মধ্যে এরূপ রাজ্য অতি বিরল, বর্তমান উনবিংশ শতাব্দীতে যাহার যথাযথ ইতিহাস লিখিতি হয় নাই। এমন কিবঙ্গ দেশের অধিকাংশ জমিদার পরিবারের নিজ নিজ বংশাবলী সম্বলিত ইতিহাসও দেখিতে পাওয়া যায়। দুঃখের বিষয় এই যে, কোচবিহার একটা বহু কালের বাধীন রাজ্য কিন্তু বাঙ্গলা কি ইংরেজী ভাষায় তাহার সম্যক বিবরণ এ পর্য্যন্ত লিখিত হয় নাই। রাজোপাখ্যান নামে এক খানা ইতিহাস লিখিত হইয়াছিল বটে, কিন্তু তাহা মুদ্রিত হয় নাই এবং তাহাও অকিঞ্চিৎকর কাপ্পনিক উপন্যাসেই পরিপূর্ণ, তৎপাঠে দেশের প্রকৃত অবস্থা কিছুই অবগত হওয়া যায় না।
আমি এই অভাব নিরাকরণ মানসে এই দুরহ কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিয়াছি। এ রাজ্যে আমি যে কার্য্যে আছি সেই কার্য্যের স্বভাবেই আমাকে দিবারাত্রি স্থানে স্থানে ভ্রমণ করিতে হইতেছে। কোচবিহারের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্তপর্য্যন্ত সমুদয় স্থান ও তাহার অধিবাসীদিগকে দেখিয়াছি। অসূর্য্যস্পশ্যে পথে গতিবিধি করিয়া, জঙ্গলময় অনেক স্থানও দেখিয়াছি। পৌরাণিক কীর্তির ভগ্নাবশেষ আনেক দেখিয়াছি। যে স্থানে যে বিবরণ পাইয়াছি, সংগ্রহ করিতে ত্রুটি করি নাই। স্থানে স্থানে ভ্ৰমণ করিয়া ৪। ৫ বৎসরের পরিশ্রমে অনেক বিবরণ সংগ্রহ করিয়াছি। যে কোনও পুস্তকে কোচবিহার সম্বন্ধীয় কোনও ঘটনা উল্লিখিত আছে, তাহাও অধ্যয়ন করিতে ত্রুটি করি নাই। যাহা জানিয়াছি পাঠকগণের নিকট তাহা উপস্থাপিত করিলাম। তাঁহারা হয়ত পড়িবার যােগ্য, জ্ঞাতব্য অনেক বিষয় চাহিবেন, তাহা আমার এই পুস্তকে আছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু যাহা আছে তাহা এক বার অনুগ্রহ পূর্ব্বক পাঠ করিলেই, আপনাকে কৃতার্থমন্য জ্ঞান করিব।
পরিশেষে কৃতজ্ঞতার সহিত প্রকাশ করিতেছি যে, এ রাজ্যের দেওয়ান, শ্রীযুক্ত রায় কালিকাদাস দত্ত বাহাদুর মহােদয়, বিশেষ যত্ন না করিলে, আমি এই কার্য্যে কখনই কৃতকার্য্য হইতে পারিতাম না। আমি যখন যে প্রকারের সাহায্য তাহার নিকট প্রার্থনা করিয়াছি, তাহাই তিনি অম্লান বদনে প্রদান করিয়াছেন। সেই সদাশয়ের আন্তরিক যত্ন, উদ্যোগ এবং উৎসাহই আমাকে সম্যক প্রােৎসাহিত করিয়াছে, তাহাতে আর অণুমাত্র সন্দেহ নাই। তিনি এবং এ রাজ্যের ফৌজদারী আহেলকার ঐীযুক্ত বাবু যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী মহাশয়, অপরিসীম পরিশ্রম সহকারে পুস্তকখানা আদ্যন্ত দেখিয়া দিয়াছেন। ইইাদের নিকট আমি চিরকৃতজ্ঞতা পাশে বন্ধ রহিলাম।
এতদ্ব্যতীত আমার কতিপয় বন্ধু কর্তৃক আমি যে উপকৃত হইয়াছি, তজ্জন্য আর আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আবশ্যক করেনা।
কোচবিহার
১৫ই মাঘ, ১২৮৯ সন
শ্রীভগবতীচরণ শর্ম্মা
# Bhagabaticharan # Kalikadas Dutt # Babu Yadavchandra