কুচবিহারের থানা থেকেই প্রাচীন নারায়ণী মূদ্রা গায়েব / Narayani Coins stolen - Coochbehar
একটা জিনিস পুরোপুরি পরিস্কার যে এক শ্রেণীর প্রশাসক থেকে শুরু করে একশ্রেণীর সাধারণ মানুষ কুচবিহারের ইতিহাস ঐতিহ্যকে লুন্ঠিত করার জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে সক্রিয় ছিল যার ধারা এখনো বজায় রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার কুচবিহারের যেকোন ইতিহাস ঐতিহ্য চুরি চামারির ব্যাপারে এত নীরব থাকে কেন?
যখন শান্তিনিকেতন থেকে নোবেল চুরি হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর পড়ে মনে হয়েছিল যেন আপামর বাঙালি বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকদের ব্যক্তিগত দামী অলঙ্কার চুরি হয়ে গিয়েছিল। হবেই বা না কেন। বাঙালি মানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী, স্বামীজী এনাদেরকেই শৈশব থেকে চামচ ফিডিং করায় বাচ্চাদের স্কুলের ক্লাসে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।
কুচবিহার, যা একসময় স্বাধীন রাজ্য পরবর্তীতে ব্রিটিশের করদমিত্র রাজ্য ছিল, রাজতন্ত্র যার ভিত্তি ছিল সেই কুচবিহার রাজ্যের মানুষদের প্রতি, কুচবিহারের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এত বৈমাতৃসুলভ আচরন কেন? কলকাতা প্রশাসন কী আশঙ্কায় ভোগে? যে কখন কুচবিহার হাতছাড়া হয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আর আলাদা রাজ্য গঠিত হবে যার ভিত্তি কামতা ছিল? কিছুদিন আগে অবশ্য কংগ্রেসের নেতা শ্রী সোমেন মিত্র এই আশঙ্কা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই বৈমাতৃসুলভ আচরন দীর্ঘ 70 বছর যাবৎ, পরিনতি হিসাবে সোমেনবাবুর আশঙ্কা যেন সত্যি হয়! বাংলা আর কামতার সংস্কৃতির কৃত্রিম মেলবন্ধন তৈরী করে কামতার ঐতিহ্য কোনোদিনও ধ্বংস করা যায়নি যাবেওনা।
কুচবিহারের ইতিহাস ঐতিহ্য সমূলে উৎপাটন করার প্রয়াসের যদি একটা তালিকা প্রকাশ করা হয় তাহলে নিম্নরুপ হবে কমপক্ষে –
1. কুচবিহার মার্জার এগ্রিমেন্ট পালন না করা। কুচবিহারবাসীকে বন্চিত করা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে।
2. দেবত্তর ট্রাস্ট কে কায়দা করে নিজের তথা কলকাতা চালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জিম্মায় রাখা।
3. কুচবিহার এর লাইব্রেরী তে আগুন লাগানো আর পুরোনো পুঁথি, নথি (কামতা সাহিত্যের) বিলুপ্ত করা।
4. কাছারীতে আগুন লাগানো আর কুচবিহারের ভুমিপুত্রের জমির দলিল বিলুপ্ত করা। যাতে পরবর্তীতে সহজেই ভুমি সংস্কার করা যায়। ভুমিপুত্রের ভুমি জবরদখল করা যায় যাদের কৃষিই একমাত্র উপার্জনের উপায়।
5. কুচবিহারের রাজবাড়ি আর আনুষঙ্গিক রাজ আমলের আবাসগুলো থেকে হরির লুটের মত হেরিটেজ সম্পত্তি গায়েব করা।
6. কামতা রাজপাটে খনন কার্য শুরু করে তা বন্ধ করে দেওয়া যাতে কেচো খুরতে কেউটে বের না হয়ে আসে। আর খননের পর যেসব মূল্যবান সামগ্রী পাওয়া গেছে তার যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করা।
7. জেলাশাসক, মহকুমাশাসক যখন তখন লাইব্রেরী থেকে বই তুলে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেটা লাইব্রেরীতে ফিরে আসল কি আসলনা তার কোনো রেকর্ড থাকেনা, সেটা দেখারও কেউ নেই। রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনের কর্তারা সবাই নিজেকে কুচবিহারের বাদশা মনে করে যার ভিত্তি কলকাতা।
8. মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ন হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে কুচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল করা হল। কিন্তু কেন?
9. কুচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ নাম পাল্টে এ বি এন সীল করা হয়েছিল 1970 এর দশকে। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নাম পাল্টে এ বি এন সীল মেমোরিয়াল করাই যেত বা কলকাতার কোনো মনিষীর নামে রাখা যেত। কিন্তু সেটা করা হয়নি। হবেও না। কারন জাগাটা বাংলার কলকাতা।
10. পুলিশের হেপাজতে হেরিটেজ নারায়ণী মূদ্রা রাখার কারন কি? (কালকের খবর অনুযায়ী) পুলিশ কী নারায়ণী মূদ্রা নিয়ে গবেষনা করবে? 60 টা নারায়ণী মূদ্রার মধ্যে মাত্র 12 টা না 13 টা পড়ে আছে। বাকীগুলো কে বা কারা গায়েব করেছে তা আর সন্দেহের অপেক্ষা রাখে না নিশ্চয়। কিন্তু খবরের কাগজ কে হঠাৎ করে এই খবরটাই বা কে দিল? কেন দিল? খবরের কাগজ তো গন্ধ শুঁকে থানায় যাইনি? মানে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রশাসক আর সর্বোপরি কলকাতা সরকার যে কামতা কুচবিহারের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধুলিস্বাৎ করার চেষ্টা করছে তা আর কুচবিহার বাসীর অজানা নয়।
এই সবকিছুর একটাই মিল কোনো ক্ষেত্রেই তদন্ত হবেনা বা হলেও তা পূর্বনির্ধারিত। কারন এর পিছনে কলিকাতা থেকে কুচবিহার এর এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষ, প্রশাসন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সুদীর্ঘ সময়কাল থেকে। শাসিত সরকারও এর দায় এড়াতে পারে না।