কামতা সাহিত্যের একঝলক / কবি হেমসরস্বতী, কবি হরিহর বিপ্র

VSarkar
Kamta Sahitya

কামতা রাজ্যে কোচ শাসন শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দীতে। কিন্ত ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ বা চতুর্দ্দশ শতাব্দী থেকেই কামতা রাজ্যে সাহিত্য সাধনার পরিমন্ডল গড়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। চতুর্দ্দশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে হেমসরস্বতী, হরিহর বিপ্র ও কবিরত্ন সরস্বতী নামে তিনজন কবির সংবাদ জানা যায়। এঁরা সকলেই কামতরাজ দুর্লভনারায়ণের সভাকবি ছিলেন। কবি হেমসরস্বতী তাঁর পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিপালক রাজা দুর্লভনারায়ণের প্রশস্তি গেয়ে বামনপুরাণ অবলম্বনে “প্রল্হাদচরিত” কাব্য রচনা করেন। এছাড়া তিনি নরসিংহ পুরাণের “হরগৌরী সংবাদ” অংশও অনুবাদ করেছিলেন।

কামতা সাহিত্য

আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, রাজা দুর্লভনারায়ণের পাত্র পশুপতির ধনঞ্জয়াদির চার পুত্রের মধ্যে ধ্রুব সকলের জ্যেষ্ঠ, এবং তিনি স্বয়ং হেমন্ত কবি, হরগৌরীর পদসেবা করে কবি হেমসরস্বতী নামে পরিচিত হয়েছিলেন। তাঁর বিপ্রকুলে জন্ম হয়েছিল, এবং আবাসস্থল ছিল কামতাভুবন। ধরলা নদীর তীরে (বর্তমান দিনহাটা মহকুমার গোসানীমারি) কামতাপুরে এইসময় একটি কালীদেবীর মন্দির ছিল, যেখানে তিনি পূজার্চ্চনা করতেন:

kamta rajpat

জাতে বৈসে কালী দেবী          তাহান চরণ সেবি

                       কহি হরগৌরী সম্বাদ।

অধ্যাপক অজয় কুমার চক্রবর্তী হেমসরস্বতীর অনুবাদে “যোগকথানাম” অংশে চর্যাপদের প্রভাব লক্ষ্য করেছেন, যদিও হেমসরস্বতীর ভাষা চর্যাপদের থেকে অনেক বেশী সহজ।

কামতাপুরী সাহিত্যের ঝলক

হরিহর বিপ্র এবং কবিরত্ন সরস্বতী একই সময়ে মহাভারতের বিভিন্ন অংশের অনুবাদ করেছিলেন। হরিহর বিপ্রের অশ্বমেধ পর্ব্বের ভণিতা থেকে কবির আত্মপরিচয় পাওয়া যায় নিম্নলিখিতভাবে:

জয় জয় নৃপতি             দুর্লভনারায়ণ রাজা

              কামতাপুর ভৈলা বীরবর

সপুত্র বান্ধবে জেবে      সুখে রাজ্য করন্তক

                জীবন্তক সহস্র বৎসর

তাহান রাজ্যত যত        সাধুজন মনমত

              অশ্বমেধ পদমধ্যে সার

বিপ্র হরিহর কবি            হরির চরণ সেবি

              পদবন্ধে করিলা প্রচার

kamtar nidarshan

সূত্র: কোচবিহার রাজদরবারে সাহিত্যচর্চা/স্বপনকুমার রায়